দ্বিতীয় খণ্ড—ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ - গঙ্গারামের মনে বড় সন্দেহ হইল। এ যদি কোন দেবী হইবে, তবে গোলা গুলি ইহার প্রয়োজন হইবে কেন ? যদি মানুষী হয়, তবে ইহাকে গোলা গুলি দিব কেন ? কাহার চর তা কি জানি ? এই ভাবিয়া গঙ্গারাম জিজ্ঞাসা করিল, “মা ! তুমি কে ?” জয়ন্তী। আমি যে হই, রমা ও মুরলা ঘটিত সংবাদ আমি সব জানি। তা ছাড়া তোমার ভূষণাগমন-সংবাদ ও সেখানকার কথাবাৰ্ত্তার সংবাদ আমি জানি। আমি যাহা চাহিতেছি, তাহ এই মুহূর্তুে আমাকে দাও, নচেৎ এই ত্রিশূলাঘাতে তোমাকে বধ করিব। এই বলিয়া সেই তেজস্বিনী ভৈরবী উজ্জল ত্রিশূল উখিত করিয়া আন্দোলিত করিল। গঙ্গারাম একেবারে নিবিয়া গেল। “আসুন দিতেছি।” বলিয়া ভৈরবীকে সঙ্গে করিয়া অস্ত্রাগারে গেল। জয়ন্তী যাহা যাহ। চাহিল, সকলই দিল, এবং পিয়ারীলাল নামে এক জন গোলন্দাজকে সঙ্গে দিল। জয়ন্তীকে বিদায় দিয়া গঙ্গারাম দুর্গদ্বার বন্ধ রাখিতে আজ্ঞা দিলেন । যেন তাহার বিনানুমতিতে কেহ যাইতে আসিতে না পারে। জয়ন্তী ও শ্রী গোলা বারুদ লইয়া, গড়ের বাহির হইয়া, যেখানে রাজবাড়ীর ঘাট, সেইখানে উপস্থিত হইল। দেখিল, এক উন্নতবপু সুন্দরকাস্তি পুরুষ তথা বসিয়া আছেন। দুই জন ভৈরবীর মধ্যে এক জন ভৈরবী বারুদ, গোলার গাড়ী ও গোলন্দাজকে সঙ্গে লইয়া কিছু দূরে গিয়া দাড়াইল, আর এক জন সেই কান্তিমান পুরুষের নিকট গিয়া, তাহাকে । জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে ?” সে বলিল, “আমি যে হই না। তুমি কে ?” জয়ন্তী বলিল, “যদি তুমি বীরপুরুষ হও, এই গোলা গুলি আনিয়া দিতেছি—এই পুরী রক্ষা কর।” সে পুরুষ বিস্মিত হইল, দেবতাম্ৰমে জয়ন্তীকে প্রণাম করিল। কিছুক্ষণ ভাবিয়া, দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিল। বলিল, “তাতেই বা কি ?” জয়ন্তী। তুমি কি চাও ? পুরুষ। যা চাই, পুরী রক্ষা করিলে তা পাইব ? জয়ন্তী। পাইবে । এই বলিয়া জয়ন্তী সহসা অদৃশ্য হইল। ზ ტ
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।