দ্বিতীয় খণ্ড—পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ - অস্ত্র, কাহারও বস্ত্র, কাহারও বাদ্য, কাহারও উষ্ণীষ, কাহারও দেহ ভাসিয়া যাইতেছে—কেহ সাতার দিয়া পলাইতেছে—কাহাকেও কুম্ভীরে গ্রাস করিতেছে। যে কয়খান নৌকা ডোবে নাই—সে কয়খানা, নাবিকের প্রাণপাত করিয়া বাহিয়া সিপাহী লইয়। অপর পারে পলায়ন করিয়াছে। একমাত্র বজের প্রহারে আহতা আস্থরী সেনার ন্যায় মুসলমান সেন। রণে ভঙ্গ দিয়া পলাইল । দেখিয়া চন্দ্রচূড় হাত যোড় করিয়া উদ্ধমুখে, গদগদকণ্ঠে, সজলনয়নে বলিলেন, “জয় জগদীশ্বর ! জয় দৈত্যদমন, ভক্ততারণ, ধৰ্ম্মরক্ষণ হরি । আজ বড় দয়া করিলে। আজ তুমি স্বয়ং সশরীরে যুদ্ধ করিয়াছ, নহিলে এই পুররাজলক্ষ্মী স্বয়ং যুদ্ধ করিয়াছেন, নহিলে তোমার দাসামুদাস সীতারাম আসিয়াছে। তোমার সেই ভক্ত ভিন্ন এ যুদ্ধ মনুষের সাধ্য নহে ।” তখন চন্দ্রচূড়, প্রাসাদশিখর হইতে অবতরণ করিলেন। পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ কামানের বন্দুকের হুড় মুড়, দুড় মুড়, শুনিয়া গঙ্গারাম মনে ভাবিল—এ আবার কি ? লড়াই কে করে ? সেই ডাকিনী নয় ত ? তিনি কি দেবতা ? গঙ্গারাম এক জন জমাদারকে দেখিতে পাঠাইলেন। জমাদার নিস্ক্রান্ত হইল। সে দিন, সেই প্রথম ফটক খোলা হইল । জমাদার ফিরিয়া গিয়া নিবেদন করিল, “মুসলমান লড়াই করিতেছে।” গঙ্গারাম বিরক্ত হইয়া বলিল, “তা ত জানি। কার সঙ্গে মুসলমান লড়াই করিতেছে ?” জমাদার বলিল, “কারও সঙ্গে নহে ।” গঙ্গারাম হাসিল, “তাও কি হয় মূৰ্খ! তোপ কার ?” জমাদার। হুজুর, তোপ কারও না। গঙ্গারাম বড় রাগিল। বলিল, “তোপের আওয়াজ শুনিতেছিস্ না ?” জমাদার । তা শুনিতেছি । গঙ্গারাম। তবে ? সে তোপ কে দাগিতেছে ? জমা । তাহ দেখিতে পাই নাই ।
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।