পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
সীতারাম

 গঙ্গা। চোখ কোথা ছিল?

 জমা। সঙ্গে।

 গঙ্গা। তবে তোপ দেখিতে পাও নাই কেন?

 জমা। তোপ দেখিয়াছি—ঘাটের তোপ।

 গঙ্গা। বটে! কে আওয়াজ করিতেছে?

 জমা। গাছের ডাল।

 গঙ্গা। তুই কি ক্ষেপিয়াছিস্? গাছের ডালে তোপ দাগে?

 জমা। সেখানে আর কাহাকে দেখিতে পাইলাম না—কেবল কতকগুলা গাছের ডাল তোপ ঢাকিয়া নুঙিয়া পড়িয়া আছে দেখিলাম।

 গঙ্গা। তবে কেহ ডাল নোঙাইয়া বাঁধিয়া তাহার আশ্রয়ে তোপ দাগিতেছে। সে বুদ্ধিমান্ সন্দেহ নাই। সিপাহীরা তাহাকে লক্ষ্য করিতে পারিবে না, কিন্তু সে পাতার আড়াল হইতে তাহাদের লক্ষ্য করিবে। ডালের ভিতর কে আছে, তা দেখে এলি না কেন?

 জমা। সেখানে কি যাওয়া যায়?

 গঙ্গা। কেন?

 জমা। সেখানে বৃষ্টির ধারার মত গুলি পড়িতেছে।

 গঙ্গা। গুলিতে এত ভয় ত এ কাজে এসেছিলি কেন?

 তখন গঙ্গারাম অনুচরকে হুকুম দিল যে, জমাদ্দারের পাগড়ি পোষাক কাপড় সব কাড়িয়া লয়। যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখিয়া মৃণ্ময় বাছা বাছা জনকত হিন্দুস্থানীকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন, এবং দুর্গরক্ষার জন্য তাহাদের রাখিয়া গিয়াছিলেন। গঙ্গারাম তাহাদিগের মধ্যে চারি জনকে আদেশ করিল, “যেখানে ঘাটের উপর তোপ আছে, সেইখানে যাও যে কামান ছাড়িতেছে, তাহাকে ধরিয়া আন।”

 সেই চারি জন সিপাহী যখন তোপের কাছে আসিল, তখন যুদ্ধ শেষ হইয়াছে, হতাবশিষ্ট মুসলমানেরা বাহিয়া পলাইয়া যাইতেছে। সিপাহীরা গাছের ডালের ভিতর গিয়া দেখিল—তোপের কাছে এক জন মানুষ মরিয়া পড়িয়া আছে—আর এক জন জীবিত, পলিতা হাতে করিয়া বসিয়া আছে। সে খুব জোওয়ান, ধুতি মালকোঁচা মারা, মাথায় মুখে গালচাল্লা বাঁধা, সর্ব্বাঙ্গে বারুদে আর ছাইয়ে কালো হইয়া আছে। চারি জন আসিয়া তাহাকে ধরিল। বলিল, “তোম্ কোন্ হো রে?”

 সে বলিল, “কেন বাপু!”