br8 সীতারাম উঠে না, কিন্তু রাণীর কাণে উঠে—মেয়ে মহলে এ রকম কথাগুলা সহজে প্রচার পায়— শাখা প্রশাখা সমেত। দুই রাণীর কাণেই কথা উঠিল। রমা শুনিয়া শয্যা লইল, কাদিয়া বালিশ ভাসাইল, শেষ গলায় দড়ি দিয়া; কি জলে ডুবিয়া মরা ঠিক করিল। নন্দ শুনিয়া বুদ্ধিমতীর মত কাজ করিল। নন্দ খুজিয়া খুজিয়া রম। যেখানে বালিশে মুখ ঝাপিয়া কাদিতেছে, আর পুকুরে ডুবিয়া মরা সোজা, কি গলায় দড়ি দিয়া মরা সোজ, ইহার যতদূর সাধ্য মীমাংসা করিতেছে, সেইখানে গিয়া তাহাকে ধরিল। বলিল, “দেখিতেছি, তুমিও ছাই কথা শুনিয়াছ।” রমা , কেবল ঘাড় নাড়িল—অর্থাৎ “শুনিয়াছি।” চক্ষুর জল বড় বেশী ছুটিল। নন্দ তাহার চক্ষুর জল মুছাইয়া, সস্নেহবচনে বলিল, “কাদিলে কলঙ্ক যাবে না, দিদি ! না কাদিয়া, যাতে এ কলঙ্ক মুছিয়া তুলিতে পারি, তাই করিতে হইবে। পারিস ত উঠিয়া বসিয়া, ধীরে সুস্থে আমাকে সকল কথা ভাঙ্গিয়া চুরিয়া বল দেখি। এখন আমাকে সতীন ভাবিস না—কালি চূণ তোর গালে পড়ক না পড়ক, রাজারই বড় মাথা হেঁট হয়েছে। তিনি তোরও প্রভু—আমারও প্রভু, এ লজ্জা আমার চেয়ে তোর যে বেশী, তা মনে করিস না । আর মহারাজা আমাকে অন্তঃপুরের ভার দিয়া গিয়াছিলেন,—র্তার কাণে এ কথা উঠিলে আমি কি জবাব দিব ?” * রম বলিল, “যাহা যাহা হইয়াছিল, আমি তাহাকে বলিয়াছি ; তিনি আমার কথায় বিশ্বাস করিয়া আমাকে ক্ষমা করিয়াছেন। আমার ত কোন দোষ নাই।” নন্দ । তা বলিতে হইবে না—তোর যে কোন দোষ নাই, সে কথা আমায় বলিয়া কেন দুঃখ পাস্ ? তবে কি হইয়াছিল, তা আমাকে বলিস্ না বলিস্— রম । বলিব না কেন ? আমি এ কথা সকলকেই বলিতে পারি। এই বলিয়া রম, চক্ষুর জল সামলাইয়া, উঠিয়া বসিয়া, সকল কথা যথার্থরূপে নন্দাকে বলিল। নন্দার সে কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস জন্মিল। নন্দ বলিল, “যদি ঘূণাক্ষরে আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়া এ কাজ করিতে দিদি, তবে কি এত কাণ্ড হইতে পায় ? তা যাক—যা হয়ে গিয়েছে, তার জন্য তিরস্কার করিয়া এখন আর কি হইবে ? এখন যাহাতে আবার মানসন্ত্ৰম বজায় হয়, তাই করিতে হইবে।” রম। যদি তা না কর দিদি, তবে তোমায় নিশ্চিত বলিতেছি, আমি জলে ডুবিয়া মরিব, কি গলায় দড়ি দিয়া মরিব । আমি ত রাজার মহিষী—এমন কাঙ্গাল গরিব ভিখারীর মেয়ে কে আছে যে, অপবাদ হইলে আর প্রাণ রাখিতে চায় ?
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।