দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ তখন সীতারাম ঘোষণা করিলেন যে, আমদরবারে গঙ্গারামের বিচার হইবে। রাজার আজ্ঞানুসারে সমস্ত নগরবাসী উপস্থিত হইয়া বিচার দর্শন করিবে । আজ্ঞা পাইয়। অবধারিত দিবসে, সহস্ৰ সহস্র প্রজাবৃন্দ আসিয়া দরবার পরিপূর্ণ করিল। দিল্লীর অনুকরণে সীতারামও এক “দরবারে আম” প্রস্তুত করিয়াছিলেন । আজিকার দিন তাহ রাজকৰ্ম্মচারীদিগের যত্বে সুসজ্জিত হইয়াছিল। দিল্লীর মত তাহার রূপার চাদোবা, মতির ঝালর ছিল না ; কিন্তু তথাপি চন্দ্ৰাতপ পট্টবস্ত্রনিৰ্ম্মিত, তাহাতে জরির কাজ। স্তম্ভ সকল সেইরূপ কারুকার্য্যখচিত, পট্টবস্ত্রে আবৃত। নানাচিত্রবর্ণরঞ্জিত কোমল গালিচায় সভামণ্ডপ শোভিত, তাহার চারি পাশ্বে বিচিত্রপরিচ্ছদধারী সৈনিকগণ সশস্ত্র শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দণ্ডায়মান। বাহিরে অশ্বারূঢ় রক্ষিবর্গ শান্তি রক্ষা করিতেছে। সভামণ্ডপমধ্যে শ্বেতমশ্মরনিৰ্ম্মিত উচ্চ বেদীর উপর সীতারামের জন্য স্বর্ণখচিত, রৌপ্যনিৰ্ম্মিত, মুক্তাঝালরশোভিত সিংহাসন রক্ষিত হইয়াছে। ক্রমে ক্রমে দুর্গ লোকারণ্য হইয়া উঠিল । সভামণ্ডপমধ্যে কেবল উচ্চ শ্রেণীর লোকেরাই স্থান পাইল। নিম্ন শ্রেণীর লোকে সহস্ৰে সহস্ৰে সভামণ্ডপ পরিবেষ্টিত করিয়া বাহিরে দাড়াইয়া দেখিতে লাগিল । বাতায়ন হইতে এই মহাসমারোহ দেখিতে পাইয়া মহারাজ্ঞী নন্দ দেবী রমাকে ডাকিয়া আনিয়া এই ব্যাপার দেখাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন, এই সমারোহের মধ্যস্থানে দাড়াইয়া বলিতে পারিবে ? সাহস হইতেছে ত ?” রম। যদি আমার স্বামিপদে ভক্তি থাকে, তবে নিশ্চয় পারিব । নন্দ । আমরা কেহ সঙ্গে যাইব ? বল ত আমি যাই । রম । তুমিও কেন আমার সঙ্গে এ অসন্ত্রমের সমুদ্রে ঝাপ দিবে ? কাহাকে যাইতে হইবে না। কেবল একটা কাজ করিও । যখন আমার কথা কহিবার সময় হইবে, তখন যেন আমার ছেলেকে কেহ লইয়া গিয়া আমার নিকট দাড়ায়। তাহার মুখ দেখিলে আমার সাহস হইবে। নন্দ স্বীকৃত হইয়া বলিল, “এখন সভামধ্যে যাইতে হইবে, একটু কাপড় চোপড় ছুরস্ত করিয়া নাও। এই বেলা প্রস্তুত হও।” . - রমা স্বীকৃত হইয়া আপনার মহলে গেল। সেখানে ঘর রুদ্ধ করিয়া মাটিতে পড়িয়া যুক্তকরে ডাকিতে লাগিল, “জয় লক্ষ্মীনারায়ণ ! জয় জগদীশ্বর ! আজিকার দিনে আমার
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।