পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৫).pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐতিহাসিক ভূমিকা হইলেও দূর দূর সীমান্তে—যেমন তটভূমি খুলনা জেলায় — বিদ্রোহ চলিতে লাগিল ; সেখানে কে যায় ? বাদশাহ এখন ৮৪ বৎসরেরও অধিক বয়স্ক, বৃদ্ধ এবং পঙ্গু ; রাজপুত্রগণ তাঁহার আসন্ন মৃত্যুর কথা ভাবিয়া তাঁহার দেহাস্তে সিংহাসন লইয়া যে যুদ্ধ বাধিবে, তাহার জন্য প্রস্তুত হইতে লাগিলেন । আজীম-উদ্দীনের একমাত্র লক্ষ্য হইল——বাঙ্গলার মত বিখ্যাত স্বর্ণখনি হইতে দুই হাতে টাকা সংগ্রহ করিয়া পিতামহের মৃত্যুর পর সিংহাসন পাইবার পথ আর সব প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা তাঁহার পক্ষে অধিক সুগম করা । ১৭০৭ সনে আওরঙ্গজীবের মৃত্যুর পর যখন আজীম বাঙ্গলা-বিহার ছাড়িয়া আগ্রার দিকে গেলেন, তখন তিনি তিন কোটি টাকা সঙ্গে লইয়া যান, এরূপ লোকে বলে । চন্দননগরের ফরাসী কুঠিয়াল সাহেবেরা এই গূঢ় অভিসন্ধির এবং দেশের দশার সঠিক চিত্র তাঁহাদের রিপোর্টে প্যারিস নগরীতে কর্তাদের নিকট পাঠান ; ১৬৯৯ হইতে ১৭০৩ পৰ্য্যন্ত তাঁহাদের চিঠি হইতে কিছু কিছু অনুবাদ করিয়া দিতেছি ( Kaoppelin, La Compagnie Indes Orientales et F. Martin, pp. 340, 461, 624 ) :- “শাহজাদ। আজীম্‌উদ্দীন [ ভুল বানান Massowdy ] বিদ্রোহীদের দমন করিবার পর প্রাচ্য দেশের প্রথা অনুসারে, লোকদের রীতিমত শোষণ করা ছাড়া আর কিছুতেই মন দিলেন না; সব কর্ম্মচারিগণ তাঁহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিতে বাধ্য হইল।...আওরংজীবের অতিবাৰ্দ্ধক্য এবং তাঁহার উত্তরাধিকার লইয়া আসন্ন প্রশ্নের ফলে সমস্ত রাজ্যময় অরাজকতা বাড়িয়া গেল। ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীরা এই সুযোগে অর্থ সংগ্রহ করিতে লাগিল এবং অত্যধিক জোরে আদায় ও অবিচার দ্বারা প্রজাদের দলিত করা ছাড়া আর কিছুই খুঁজিল না । আমাদের [ ইষ্ট ইণ্ডিয়া ] কোম্পানীও ইহা হইতে রেহাই পাইল না। শাহজাদা আজীম এবং বাদশাহ কর্তৃক অসামান্য ক্ষমতা-যুক্ত হইয়া বঙ্গে প্রেরিত নূতন দেওয়ান ( মুর্শিদ কুলি খাঁ ) নিজেই ঘূণিত লুণ্ঠনের দৃষ্টান্ত দেখাইলেন এবং প্রজাদের শোষণ করিবার কোন পন্থা হইতেই নিবৃত্ত থাকিলেন না।...সমস্ত প্রদেশটি ক্রমাগত গরীব হইতে লাগিল, টাকা অধিক হইতে অধিকতর দুষ্প্রাপ্য হইল, শিল্পবাণিজ্যে মন্দা ধরিল। বঙ্গদেশে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব হইয়া দাড়াইল ।” ঠিক এই অশাস্তি ও অত্যাচারের মধ্যে সীতারামের উত্থান। সুতরাং তাঁহার কাছে অনেক সঙ্গী সহায়ক আসিয়া জুটিল, অনেক পিষ্ট লোক তাঁহার নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যে আশ্রয় লইল ৷ ১৬৯৯ হইতে ১৭১২ পর্য্যন্ত সীতারাম অবাধে রাজ্য বিস্তার ও নিষ্কণ্টক রাজস্থখ ভোগ করিলেন। কিন্তু ১৭১৩ সনে ফর্রুসিয়র্ দিল্লীর বাদশাহ হইবার পর মুর্শিদ কুলী