পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৫).pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐতিহাসিক ভূমিকা বাঙ্গলাদেশে সেই সময়ে এই শ্রেণীর একটি ঘটনা ঘটে, তাহা সলিমুল্লা ও ঘুলাম হুসেন সালিম নিজ নিজ ইতিহাসে লিখিয়া গিয়াছেন :- একজন ফকির চূনাখালীর তালুকদার বৃন্দাবনের নিকট ভিক্ষা চাওয়ায় তিনি বিরক্ত হইয়৷ উহাকে বাড়ী হইতে বাহির করিয়া দেন । ফকির কতকগুলি ইট কুড়াইয়া আনিয়া তাহা সাজাইয়া বৃন্দাবনের বাড়ী হইতে বাহিরে যাইবার পথ বন্ধ করিয়া একটি ছোট দেওয়াল খাড়া করিল এবং উহাকে মসজিদ নাম দিল । যখনই বৃন্দাবন ঐ পথে চলিতেন, ফকির উচ্চস্বরে আজান পঁড়িত। বৃন্দাবন উত্যক্ত হইয়া একদিন কয়েকখান ইট ফেলাইয়া দিলেন এবং ফকিরকে গালি দিয়া তাড়াইয়া দিলেন। ফকির গিয়া মুর্শিদ কুলীর নিকট নালিশ করিল। বিচারক কাজী মুহম্মদ শরফ্ উলেমাদের লইয়া আলোচনা করিয়া বৃন্দাবনের প্রাণদণ্ডাজ্ঞা দিলেন। মুর্শিদ কুলী এই হত্যায়, অনিচ্ছুক হইয়া কাজীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘এই বেচারা হিন্দুকে বাঁচাইবার জন্য ধর্ম্ম-আইনের কড়া বিধি এড়াইবার কোন উপায় আছে কি ?” কাজী উত্তর দিলেন, 'হাঁ, আছে। উহার প্রাণ লইতে ততক্ষণ দেরি হইতে পারে, যতক্ষণে উহার প্রাণভিক্ষার্থী বন্ধুকে আগে মারিয়া ফেলা হইবে । তাহার পর উহাকে বধ করা নিশ্চিত।' মুশিদ কুলী খাঁর সব চেষ্টা বিফল হইল ; এমন কি, সুবাদার শাহজাদা আজীম-উদ্দীনের অনুরোধ পর্য্যন্ত বাদশাহ গ্রাহ্য করিলেন না।...তিনি শাহজাদার পত্রের উত্তরে লিখিয়া পাঠাইলেন, — 'কাজী শরফ খোদাকি তরফ্।' [ তারিখ-ই-বংগালা, মুর্শিদ কুলী খাঁ অধ্যায়ের ঠিক শেষে; রিয়াজ-উস-সালাতীন, মূল ২৮৫-২৮৬ পৃ ] । বাদশাহ এই. মুহম্মদ শরফকে নিজে বাছিয়া লইয়া বাঙ্গলার কাজী নিযুক্ত করিয়া পাঠান এবং মুর্শিদ কুলী সব মোকদ্দমায় এই কাজীর মত [ ফতোওয়া ] অনুসারে কাজ করিতেন । কুরাণে [ নবম সূরা, ২৯ শ্লোক ] লেখা আছে, “যাহারা সত্য-ধৰ্ম্ম অর্থাৎ ইসলাম্ গ্রহণ "করে না, তাহাদের সঙ্গে যুদ্ধ করিবে, যতক্ষণ না তাহারা হীনভাবে ( ওহম্ সাধিরূণ ) হাত দিয়া জজিয়া কর দেয়।” এজন্য আওরংজীব হুকুম দিলেন যে, কোন হিন্দু ঐ টেক্সের টাকা বাহক দিয়া পাঠাইয়া দিলে তাহা গ্রহণ করা হইবে না, সে নিজে আসিয়া দাড়াইয়া থাকিয়া মাথা নীচু করিয়া নিজ হাতে টাকাগুলি তহসিলদারের হাতে দিবে । তাঁহার অনেক চিঠি পাওয়া গিয়াছে, যাহাতে তিনি এই নিয়ম পালনে অবহেলা করার জন্য মুসলমান কর্মচারীদের ধমকাইয়াছিলেন ।