১৪ সীতারাম যখন বাদশাহের পৌত্র আজীম-উদ্দীন বাঙ্গলা দেশের শাসন-কৰ্ত্তা, সেই ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দে কিরূপ সদা-সজাগ গভর্ণমেন্টের চেষ্টায় হিন্দু-মন্দির ধ্বংস করা হইত, তাহা এক সরকারী পত্র হইতে পরিষ্কার বুঝা যায় । পত্রখানি বাদশাহের আজ্ঞায় মীর মুহম্মদ আমান নামক বাঙ্গলা-সুবার সংবাদ - লেখক ( সওয়ানে-নিগার )কে ভৎসনা করিয়া লেখা হইয়াছিল; ইহা শেখ মুহম্মদ ফাজিলের পুত্র মুহম্মদ জাফর-সঙ্কলিত ‘ইন্শা-ই-আজীব্’ নামক হস্তলিপির নবম পাতায় আছে। অনুবাদ :- “এই সময় বাঙ্গলা দেশের [ গুপ্ত- ] সংবাদ হইতে বাদশাহ জানিতে পারিলেন যে, প্রয়াগদাস ও মথুরামল নামক দুইজন গুজরাটী ব্রাহ্মণ মসাবাদ অঞ্চলে লালজী নামক একটি প্রস্তরমূর্তি গড়াইয়া, মন্দিরে স্থাপন করিয়া আঁধার-হৃদয়ে অন্যান্য বহু বদমাশ জনতার সহযোগে তাহাকে পূজা করিতেছে এবং প্রত্যহ নিকট ও দূর হইতে অনেক লোক আসিয়া ভিড় করিয়া এই ঘৃণিত কার্য্যে প্রশ্রয় দিতেছে। আমাদের ধাম্মিক বাদশাহের সমস্ত আগ্রহ ইসলামধৰ্ম্ম প্রচলনে এবং হেয় কাফিরদের রীতিনীতি দূর করিতে নিযুক্ত, যাহার জন্য এই ভারত সাম্রাজ্যের কথা দূরে থাক্, এমন কি, ইরাণ ও তুরাণ, রুশ ও খোরাসান, যেখানেই মূৰ্ত্তিপূজা দেখা দেয়, যত দিন পর্যন্ত সেখান হইতে সেই অপ-ধৰ্ম্ম ও মিথ্যাবিশ্বাসের সুত্র সম্পুর্ণ দূর না হয়, তত দিন তিনি সে দিকে স্বয়ং সৈন্য চালনা করিতে বিরত থাকিবেন অতএব বিশ্বপ্রভু জগৎ-মান্য সম্রাট্ এই আজ্ঞা পাঠাইতেছেন যে, শাহজাদা মুঃ আজীম্ এই অপদার্থ দলকে সাজা দিয়া, ঐ ঘূণিত পুত্তলিকা ভাঙ্গিয়া ফেলুন এবং ঐ স্থানে একটি উচ্চ মসজিদ নির্মাণ করুন এবং নিয়ম করিয়া দিন যে, দলে দলে আলোকিত হৃদয় মুসলমানগণ ঐখানে অদ্বিতীয় ঈশ্বরের আরাধনায় নিযুক্ত থাকিবে । না। কিন্তু এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় যে, আপনি শাহজাদার সরকারী সংবাদ-লেখক- [ সওয়ানে-নিগার- ]পদে প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও আপনার সংবাদের রিপোর্টে ঠিক সময়ে এই ঘটনার উল্লেখ করেন নাই, অথচ বাহিরের এক লোক ইহা বাদশাহকে জানাইয়াছে ! বাদশাহ বার বার মির্জা ইয়ার আলি বেগ[ ডাক ও গুপ্তচর বিভাগের প্রধান অধ্যক্ষ ]কে বলিলেন,—‘এর ভাই মির্জা লাহোরী নিজ কাজ ভালরূপে না করায় আমার কোপে পড়িয়াছিল, অথচ এ ( বাঙ্গলার সওয়ানে-নিগার ) সম্রাটের রাগকে ভয় করে না; ইহাকে নিশ্চয়ই শাস্তি দিতে হইবে। অতএব, আপনার উচিত যে, ভবিষ্যতে প্রত্যেক ঘটনাই তৎক্ষণাৎ ভাল করিয়া লিখিয়া আপনার সংবাদ-চিঠির অন্তর্গত করিবেন।” পত্রলেখকের নাম মীর মুলতালী । [ তখনও মখসুসাবাদের নাম মুরশিদাবাদ করা হয় নাই এবং দ্বিতীয় নামের সৃষ্টিকর্তা তখনও কার্ তলব্ খাঁ নামে পরিচিত, মুরশিদ কুলী খাঁ উপাধি .. পান নাই ৷ ]
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৫).pdf/১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।