পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৫).pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐতিহাসিক ভূমিকা played an active part in reviving and sustaining the sentiment of nationality, which for good or evil has changed the face of Europe in the nineteenth and twentieth centuries." (Times, Lit. Sup, 30 June 1945, p. 307) “ইতিহাস এবং উপন্যাস এক বস্তু নহে। ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রকৃত স্থান সাহিত্যের শ্রেণীতে, ইতিহাসের শ্রেণীতে নহে।...আজকাল ইউরোপে যে সব ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখা হইতেছে, তাহার প্রধান দোষ এই যে, তাহার মধ্যে অতীত কালের সত্য ব্যক্তি এবং ঘটনার ভাগ অতিমাত্রায় বাড়িয়া চলিয়াছে এবং গ্রন্থকারের কল্পনায় প্রস্তুত চরিত্র কমিয়া যাইতেছে। লেখক যতই বেশী পরিমাণে নিজ কল্পনায় সৃষ্ট চরিত্র ও ঘটনা রঙ্গমঞ্চে নামাইবেন, ততই তাঁহার একখানা সাহিত্যগ্রন্থ, একটি প্রকৃত কলার বস্তু রচনা করিবার সুযোগ বাড়িবে । “রয়াল হিষ্টরিকাল সোসাইটীর সম্মুখে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে বক্তৃতা করিবার সময়, অধ্যাপক গুচ বলিয়াছেন, 'যাহা হইলেও হইতে পারিত, তাহা এবং সত্যই সংঘটিত ব্যাপার, এক জিনিষ নহে ।’ অতএব ঐতিহাসিক উপন্যাস যতই যত্নে লিখিত ও পণ্ডিতোচিত তথ্যে পূর্ণ হউক না কেন, তাহা আসল ইতিহাস পাঠের স্থান কখনই লইতে পারে না । তথাপি, ঐতিহাসিক উপন্যাসের একটা সার্থকতা আছে; তাহার কারণ, সত্য ইতিহাসের মধ্যে একটা কি-যেন অভাব বোধ হয়; অর্থাৎ অতীত যুগের মৃত নায়ক নায়িকাগণ তাঁহাদের জীবনের প্রায় সব গোপনীয় ব্যাপারগুলি সঙ্গে লইয়া তিরোধান করিয়াছেন, এবং আধুনিকেরা অতীত যুগকে চিরদিনই শুধু ভাঙ্গা ভাঙ্গা রকমে চিনিতে পারে। পাঠক- হৃদয়ের এই শূন্য স্থান ঐতিহাসিক উপন্যাস পূর্ণ করে । অধ্যাপক গুচ বহু দৃষ্টান্ত দিয়া দেখাইয়াছেন, ঐতিহাসিক উপন্যাস, আমাদের ইতিহাস করিয়াছে। লক্ষ লক্ষ পাঠক ঐতিহাসিক উপন্যাস হইতে করিয়াছে, তাহা অন্য কোন উপায়ে পাইতে পারিত না । অবশেষে তিনি বলেন— ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস সাধারণের হৃদয়ে জাতীয়তাবোধ জাগাইতে এবং সজীব রাখিতে অতি ক্রিয়াশীল শক্তির কাজ করিয়াছে; আর এই জাতীয়তা-বোধই ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের রূপ বদলাইয়া দিয়াছে।” বুঝিতে কত বেশী সাহায্য ইতিহাসের যে জ্ঞান লাভ বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের প্রকাশিত বঙ্কিম-গ্রন্থাবলীর এক একটি ঐতিহাসিক উপন্যাসের যে ভূমিকা লিখিয়া দিয়াছি, তাহাতে যে সকল সিদ্ধান্তে পৌঁছান গিয়াছে, তাহারই আশ্চর্য্য সমর্থন পাওয়া গেল বিলাতের বিখ্যাত ‘টাইম্‌স্‌' পত্রিকার নবীনতম সংখ্যার সম্পাদকীয় প্রবন্ধে, যাহার সারাংশ উপরে উদ্ধৃত হইল । বাঙ্গালী পাঠক দেখিবেন যে, বঙ্কিম নিজেই এই সাহিত্যিক নীতি অনুসরণ করিয়াছেন এবং তাঁহার ঐতিহাসিক