ঐতিহাসিক ভূমিকা অভ্যাস করেন। প্রথমতঃ নবাবের অধীনে রাজস্ব আদায় ও হিসাবের কাজ করিবার সময় তিনি মফঃস্বলের দলবদ্ধ ডাকাত এবং বিদ্রোহী পাঠান জমিদারদের দমন করিবার শর্তে প্রকাগু নলদী পরগণা (বর্তমান নড়াইল, মাগুরার ঠিক দক্ষিণে সংলগ্ন ) বাঙ্গলার সুবাদারের নিকট হইতে নিজনামে বন্দোবস্ত করিয়া লন। আমলার পুত্র এইরূপে তালুকদার হইলেন, ক্রমে জমিদার হইবেন, রাজা হইবেন, অবশেষে বিদ্রোহী সামস্ত হইবেন ; তাহার আয়োজন আরম্ভ হইল ৷ বিশাল নলদী পরগণা হাতে আসার ফলে সীতারামের আয় ও লোকবল দ্রুত বাড়িয়া উঠিতে লাগিল ৷ প্রথমে তাঁহার দুই জন বড় বন্ধু জুটিল ; একজন রঘুরাম (পক্ষান্তরে রামরূপ) ঘোষ, দক্ষিণরাঢ়ীয় কায়স্থ, বীর ও পালোয়ান, মেনাহাতী এই ডাক নামে খ্যাত সেনাপতি হইলেন ৷ অপর জন মুনিরাম রায়, বঙ্গজ কায়স্থ, উকীল ( মন্ত্রণাদাতা অর্থাৎ ফরেন সেক্রেটারী ) হইলেন । তাঁহার দেওয়ান যদুনাথ গাঙ্গুলী ( উপাধি মজুমদার ) বোধ হয় বঙ্কিমের চন্দ্রচূড় হইবেন। তাঁহার সেনা-বিভাগে যোগ দিল—বতাওর্ খাঁ (ভূতপূর্ব ডাকাতের সর্দ্দার ), আমল বেগ মুঘল, হিন্দু নিম্নজাতীয় রূপচাঁদ ঢালী এবং ফকিরা মাছ-কাটা অর্থাৎ নমঃশূদ্র নিকারী। তাহার উপর, লোকমুখে এখনও সীতারামের সেনাপতিদের মধ্যে মোড়া . সিংহ, গাবুরডলন ( ডাক নাম ) প্রভৃতি প্রসিদ্ধ। ক্রমে নবাব সরকার হইতে আরও অনেক তালুক বন্দোবস্ত করিয়া লইয়া, আয় অত্যন্ত বৃদ্ধি করিলেন, অসংখ্য বীর ও ভাগ্যান্বেষী সৈন্য আসিয়া তাঁহার দলে যোগ দিল; সীতারাম বিদ্রোহ দমন ও খাজনা আদায়ের নামে সেই অঞ্চলের সব ছোট বড় জমিদারদের পদানত অথবা তাঁহাদের জমিদারী লুঠ করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন । বঙ্গের সুবাদার ঐ সব অরাজক অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের সংবাদ এবং মাঝে মাঝে কিছু কিছু খাজনা পাইয়া সন্তুষ্ট থাকিতেন; কারণ, ১৬৮৯-১৬৯৭ পর্য্যন্ত বাঙ্গলার সুবাদার ছিলেন শান্তিপ্রিয়, গ্রন্থকীট, নিশ্চল, বৃদ্ধ নবাব ইব্রাহিম খাঁ ; তাঁহার শাসনের কথা পরে বলিব । সীতারাম নবাব-দরবারে নিজ উকীল ( অর্থাৎ দূত ) দ্বারা সুবাদারকে সন্তুষ্ট করিয়া তাঁহার সুপারিশে দিল্লীর দরবার হইতে 'রাজা' উপাধি ও জমিদারী ফর্মান* আনিয়া মহাগৌরবে স্বদেশে রাজত্ব করিতে লাগিলেন। এবং এই নূতন পদমর্যাদার উপযুক্ত এক রাজধানী স্থাপন করিলেন। তাঁহার পৈতৃক পুরাতন কাচারী সূর্য্যকুণ্ডগ্রাম এবং পৈতৃক
- স্থানীয় প্রবাদ যে, সীতারাম স্বয়ং দিল্লী যান এবং সেখানে রাজমন্ত্রীদের টাকায় ও প্রতিশ্রুতিতে
হস্তগত করিয়া এই উপাধি ও ফর্মান লাভ করেন। কিন্তু তখন বাদশাহ ও তাঁহার সব বড় মন্ত্রীর। দাক্ষিণাত্যে, দিল্লী একটি প্রদেশ মাত্র হইয়াছিল। করদ রাজাদের বাদশাহী ফৰ্ম্মান দেওয়া হইত, জমিদারদের শুধু পরওয়ানা এবং তাহাও উজীরের মোহর-যুক্ত