পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৫).pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম বাসস্থান হরিহরনগর, এই দুটির মধ্যস্থলে বাগ জানি গ্রামে নূতন রাজধানী গড়িলেন, তাহার নাম দিলেন মহম্মদপুর । মধুমতী নদীর পশ্চিমে যেখানে ঐ নদী একটা হেয়ার-পিনের মত পুব দিকে বাঁকিয়া চলিতেছে, সেই বাঁকের মুখের কাছে মহম্মদপুর ; আর মহম্মদপুর হইতে ক্রমাগত উত্তর-পূর্বদিকে আট দশ মাইল চলিলে মধুমতী ও পরে বারাসিয়া, এই দুই নদী পার হইয়া ভূষণা সহর,—সে যুগে ঐ জেলার শাসনকেন্দ্র, সভ্যতা ও শিল্পের আবাস, এবং বহু পণ্ডিত ও সাধু লোকের বসতিস্থল । বিজ্ঞ শ্রমী ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্র এই স্থান-নির্ব্বাচনের প্রশংসা করিয়াছেন । “মহম্মদপুরের অবস্থান অতি সুন্দর । উহার তিন দিকে বিল, এক দিকে নদী, মধ্যস্থানে উচ্চ স্থল। ভূষণার দিকে অর্থাৎ প্রধানতঃ যে দিক্ হইতে শত্রু আসিবার সম্ভাবনা, সেই · পূর্বদিকেই নদী। কৃত্রিম পরিখা দ্বারা দক্ষিণ দিক্ দুপ্রবেশ্য করা যায়। অপর দুই দিকে দূরবিস্তৃত বিল, কিছুই করিবার আবশ্যক নাই...এই স্থানে একটি ভগ্ন মন্দিরে সীতারামের [ বংশের ] ভাগ্যদেবতা লক্ষ্মীনারায়ণ শিলা আবিষ্কৃত হন [ তাঁহার পিতা উদয়নারায়ণ কর্তৃক । ] সীতারাম এখানে একটি মৃণ্ময় দুর্গ, কয়েকটি সুপ্রশস্ত জলাশয়, সুন্দর সুন্দর মন্দির ও আবাস-গৃহ নিৰ্ম্মাণ করেন” ( ৫৪০-৫৪৪ পৃ ) । এইখানকার তিনটি মন্দিরের ফলক অথবা ফলকের লিপির নকল পাওয়া গিয়াছে, তাহার সময় ১৬৯৯, ১৭০৩ এবং ১৭০৪ খ্রীষ্টাব্দ এবং সবগুলিই সীতারামের নামে। বহুদুর- বিস্তৃত প্রাচীরের চিহ্ন, কতকগুলি মাটির ঢিবি এখনও নীরবে দাঁড়াইয়া আছে ৷ ক্রমে চারি দিকে রাজ্য বিস্তার করিয়া সীতারাম অবশেষে ১৭১২ খ্রীষ্টাব্দে ভূষণার ফৌজদার সৈয়দ আবুতুরাকে অকস্মাৎ আক্রমণে হত্যা করেন, এবং ভূষণা দখল করিয়া ফেলেন। সতীশচন্দ্র মিত্র দেখাইয়াছেন যে, চরম উন্নতির সময় সীতারামের রাজ্য পদ্মার উত্তরে কিছু দূর হইতে সুন্দরবনের তটভূমি পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল ; উত্তর সীমা পাবনা, দক্ষিণ সীমা ভৈরব নদ ; পূর্বে মধুমতীর ওপারে তেলিহাটী পরগণার শেষ, পশ্চিমে মামুদশাহী পরগণা পর্য্যন্ত । “সীতারামের জমিদারীর রাজস্ব ৭০ লক্ষ টাকার কম নহে” ( ৫৬৪ পৃ )। এ কথা আমার নিকট অসম্ভব বোধ হয়; কারণ, ১৭০৭ খ্রীষ্টাব্দে মুর্শিদ কুলী খাঁর সুশাসন ও সৎ বন্দোবস্তের ফলেও সমগ্র বাঙ্গলা সুবার সরকারী খাজনা ১৩১ লক্ষের উপর উঠে নাই। আবুতুরাবের হত্যার সংবাদ পাইয়া মুর্শিদ কুলী খাঁ সীতারামকে দমন করিবার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিলেন । তিনি নিজ আত্মীয় বখ্শ আলী খাঁকে ভূষণার নুতন ফৌজদার- পদ দিয়া সৈন্য সহ আক্রমণ করিতে পাঠাইলেন, এবং পার্শ্ববর্ত্তী সব জমিদারদের হুকুম দিলেন, সীতারামের বিরুদ্ধে এই অভিযানের সাহায্য করিতে। সীতারামের তখন দুরদৃষ্ট— . তিনি বিলাসে মগ্ন, সেনাপতি মেনাহাতী অতর্কিতভাবে স্নানের সময় নিহত হইলেন ; আর