পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
২৭

পূর্ব্বক, প্রাণপ্রিয়া জানকীরে লইয়া গিয়া, নির্মল রঘুকুল অভূতপূর্ব্ব অপবাদে দূষিত করিয়াছিল? কি নিমিত্তেই বা, সেই অপবাদ, অদ্ভুত উপায় দ্বারা নিঃসংশয়িতরূপে অপসারিত, হইয়াও, দৈবদুর্বিপাক বশতঃ পুনর্বার নবীভূত হইয়া, সর্ব্বতঃ সঞ্চারিত হইবে? সর্ব্বথা, আমার জন্মগ্রহণ ও শরীরধারণ দুঃখভোগের নিমিত্তেই নিরূপিত হইয়াছিল। এখন কি করি, কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। এই লোকাপবাদ দুর্নিবার হইয়া উঠিয়াছে। এক্ষণে, অমূলক বলিয়া, এই অপবাদে উপেক্ষাপ্রদর্শন করি; অথবা, এ জন্মের মত নিরপরাধ জানকীরে বিসর্জন দিয়া, কুলের কলঙ্কবিমোচন করি; কি করি, কিছুই স্থির করিতে পারিতেছি না। কেহ কখনও আমার মত উভয় সঙ্কটে পড়ে না।

 এইরূপ আক্ষেপ করিয়া, রাম, কিয়ৎ ক্ষণ, অধোদৃষ্টিতে মৌনাবলম্বন করিয়া রহিলেন। অনন্তর দীর্ঘনিশ্বাসপরিত্যাগ পূর্ব্বক বলিলেন, অথবা এ বিষয়ে আর কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্যবিবেচনার প্রয়োজন নাই। যখন রাজ্যের ভারগ্রহণ করিয়াছি, সর্ব্বোপায়ে লোকরঞ্জন করাই আমার কর্ত্তব্য কর্ম্ম ও প্রধান ধর্ম্ম; সুতরাং, জানকীরেই বিসর্জন দিতে হইল। হা হত বিধে! তোমার মনে এই ছিল। এই বলিয়া, রাম মুর্চ্ছিত ও ভূতলে পতিত হইলেন।

 কিয়ৎ ক্ষণ পরে চেতনাসঞ্চার হইলে, রাম নিতান্ত করুণ