পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
সীতার বনবাস।

অনর্থপাত ঘটিয়াছে; না জানি, কি সর্ব্বনাশের কথাই বলিবেন। কিন্তু, অনুভবশক্তি দ্বারা কিছুরই অনুধাবন করিতে না পারিয়া, শ্রেবণের নিমিত্ত নিতান্ত উৎসুক হইয়া, তাঁহারা, একান্ত আকুল হৃদয়ে, তদীয় বদনে দৃষ্টিযোজনা করিয়া রহিলেন।

 রাম, কিয়ৎ ক্ষণ, মৌনাবলম্বন করিয়া রহিলেন, অনন্তর, দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বলিলেন, ভ্রাতৃগণ, শ্রবণ কর; আমাদের পূর্ব্বে, ইক্ষাকুবংশে যে মহানুভব নরপতিগণ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তাঁহারা অপ্রতিহত প্রভাবে প্রজাপালন, ও অশেষবিধ অলৌকিক কর্ম্মসমুদয়ের অনুষ্ঠান দ্বারা, এই পরম পবিত্র রাজবংশকে ত্রিলোকবিখ্যাত করিয়া গিয়াছেন। আমার মত হতভাগ্য আর নাই; আমি জন্মগ্রহণ করিয়া সেই চিরপবিত্র ত্রিলোকবিখ্যাত বংশকে দুষ্পরিহর কলঙ্কপঙ্কে লিপ্ত করিয়াছি। লক্ষণ, তোমার কিছুই অবিদিত নাই। যৎকালে, আমরা তিন জনে পঞ্চবটীতে অবস্থিতি করি, দুর্বৃত্ত দশানন, আমাদের অনুপস্থিতিকালে, বলপূর্ব্বক, সীতারে আপন আলয়ে লইয়া যায়। সীতা একাকিনী, সেই দুর্বত্তের আলয়ে, দীর্ঘ কাল অবস্থিতি করেন। অবশেষে আমরা সুগ্রীবের সহায়তায়, দুরাচারের সমুচিত শাস্তিবিধান করিয়া, সীতার উদ্ধারসাধন করি। আমি সেই একাকিনী পরগৃহবাসিনী সীতারে লইয়া গৃহে রাখিয়াছি; ইহাতে পৌরগণ ও জনপদবর্গ অসন্তোষপ্রদর্শন ও কলঙ্ককীর্ত্তন করিতেছে।