অষ্টম অধ্যায় । 3 * (t নাদের স্তায় কোন একটা আশ্চৰ্য্য ব্যাপার সংঘটিত হইবে, তাহা ও তিনি এক প্রকার আশঙ্কা করিয়াছিলেন । এই নিমিত্তই তিনি শোকবিহবলা জানকীকে রামের আর্তনাদসম্বন্ধে আপনার বক্তব্য জ্ঞাপন করিয়া নিশ্চিন্তু ছিলেন। কিন্তু সীতা কুমুমকোমলপ্রাণ রমণী ; তিনি একান্তই পতিপরায়ণা, পতির সামান্ত কষ্ট্রেই তাহার হৃদয় ব্যথিত হয় ও তাহার সামান্ত বিপদাশঙ্কাতেই তাছার মন বিচলিত হইয়া উঠে। বিশেষতঃ তিনি অতিশয় মুগ্ধস্বভাব। ; লক্ষ্মণের ন্যায় তাহার স্বপ্নদৃষ্টি ও বিচারক্ষমতা ছিল না ; সুতরাং তাহার স্তায় তিনি সেই মৃগকে কোন মায়াবী রাক্ষস বলিয়া বিশ্বাস করিতেও সমর্থ হন নাই। মায়াবী রাক্ষসেরা যে উক্তপ্রকার আর্তনাদ করিয়া তাহাদের কোন অনিষ্টচেষ্টা করিতে পারে, তাহা তাহার হৃদ্বোধই ছিল না। ইহা ব্যতীত তিনি মনোমধ্যে রামচন্দ্রের কোনও অমঙ্গল আশঙ্কা না করিয়া নিশ্চিন্তমনে কুটীরে অবস্থান করিতেছিলেন, এমন সময়ে অকস্মাৎ সেই হৃদয়বিদারী আর্তনাদ শ্রুতিগোচর হইল । পতিপ্রাণার কোমল প্রাণ বিকম্পিত হইল। জবলা সীতা মনে করিলেন বীরবর লক্ষ্মণ অনতিবিলম্বেই ধনুৰ্ব্বাণহস্তে বিপন্ন ভ্রাতার রক্ষার্থ ধাবমান হইবেন ; কিন্তু তিনি তাহাকে স্থির ও অবিচলিত দেখিয়া সহসা ধৈর্য্যসীমা অতিক্রম পূর্বক একেবারে উন্মাদিনীর ন্তায় ভীষণমূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করিলেন। সীতা পতিশোকে আচ্ছন্ন হইয়া ক্ষণকালের জন্য পুত্রস্থানীয় দেবর লক্ষণকে, এবং এমন কি, আপনাকেও বিস্তৃত হইয় গেলেন। সীতা ঘোর দুর্দশগ্রস্ত হইলেন, তাছার মন বিকৃত অবস্থায় উপনীত হইল। মনের এরূপ অবস্থা উপস্থিত হইলে, লোকে কাণ্ডজ্ঞানশূন্ত হয়। সীতাদেৰীও তাই স্নেহভাজন লক্ষ্মণের প্রতি কটুক্তি প্রয়োগ করিলেন। ঈদৃশ অবস্থায় তাহার দ্যায় পতিপ্রাণ রমণীর যে এই প্রকার মানসিক বিকার ঘটিতে পারে, আমরা তাহ বিলক্ষণ হৃদয়ঙ্গম করিতে সমর্থ হইতেছি।
পাতা:সীতা (অবিনাশ চন্দ্র দাস).djvu/১০৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।