२०२ সীতা । তখন লক্ষ্মণ বহুচেষ্টার পর বাষ্পগদগদকণ্ঠে কহিলেন “দেবি, মহারাজ লোকমুখে তোমার রাক্ষসগৃহবাসনিবন্ধন দারুণ অপবাদ শ্রবণ করিয়া অতিশয় সস্তপ্ত হইয়াছেন, এবং তোমাকে গঙ্গাতীরস্থ এই আশ্রমসন্নিধানে পরিত্যাগ করিতে আমার প্রতি আদেশ করিয়াছেন । তুমি আমার সমক্ষে নির্দোষ প্রমাণিত হইয়াছিলে, তথাপি মহারাজ । কলঙ্কভয়ে তোমায় পরিত্যাগ করিলেন । তিনি তোমার বাস্তব যে কোন দোষ আশঙ্কা করিয়াছেন, তাহা মনে করি ও না। দেবি, অদূরে মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রম ; মহর্ষি আমার পিতা রাজা দশরথের । পরম বন্ধু ; তুমি তাহারই চরণচ্ছায়ায় আশ্রয় লইয়া বাস কর । মহারাজ আমাকেই এই নিষ্ঠুর আদেশপালনে নিযুক্ত করিয়াছেন ; কিন্তু ইতঃপূৰ্ব্বে আমার মৃত্যু হইলে আমাকে আজ আর এই শোচনীয় দৃশু দেখিতে হইত না। আর্য্যে, আমি অগ্রজের বশবৰ্ত্তা, আমার অপরাধ লই ও না।” লক্ষ্মণ এই বলিয়া মুক্তকণ্ঠে রোদন করিতে লাগিলেন। লক্ষ্মণের মুখে এই রোমহর্ষণ বাক্য শ্রবণ করিয়া জনকনন্দিনী কিয়ৎক্ষণ বিমূঢ়ার স্তায় দণ্ডায়মান রছিলেন, পরে সহসা মূৰ্ছিত হইয়৷ ভূমিতলে পতিত হইলেন। তিনি ক্ষণকাল পরে সংজ্ঞা লাভ করিয়া জলধারাকুললোচনে দীনবচনে কহিতে লাগিলেন “লক্ষ্মণ, বিধাতা আমাকে দুঃখভোগের নিমিত্তই স্বষ্টি করিয়াছেন। আমি কেবল দুঃখেরই মুখ দেখিতেছি। অথবা বিধাজ্ঞারই বা দোষ, কি ? আমি পুৰ্ব্বজন্মে অনেক পাপানুষ্ঠান করিয়াছিলাম, অনেক পতিব্ৰত কামিনীকে পতিবিয়োগদুঃখ প্রদান করিয়াছিলাম, তাহারই ফলে আজ শুদ্ধচারিণী ও পতিব্ৰতা হইয়াও স্বামিকর্তৃক পরিত্যক্ত হইলাম। হায়, পূৰ্ব্বে আমি রামের পার্শ্ববৰ্ত্তিন থাকিয়াই বনবাসের সকল কষ্ট সহ করিয়াছিলাম, কিন্তু এক্ষণে আমি একাকিনী কিরূপে এই আশ্রমে
পাতা:সীতা (অবিনাশ চন্দ্র দাস).djvu/২০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।