উপসংহার। २२१ দেখিলেন। জানকী প্রেমময় জীবিতনাথের এই নির্দয় ব্যবহারে মৰ্ম্মপীড়িত হইলেন, কিন্তু তজ্জন্ত তাহার উপর কোন দোষারোপ করিলেন না। সীতা বুঝিলেন স্বামীর কিছুমাত্র দোষ নাই ; যত •দোষ তাহার অদৃষ্টের, তাহার জন্মান্তরপাতকের । সীতার অপবাদে রাম দুঃখিত হইয়াছেন, তাহাদের নিষ্কলঙ্ক কুলে কলঙ্ক হইয়াছে ; এই কলঙ্ক ক্ষালনের জন্ত সীতাকে যদি প্রাণপৰ্য্যস্ত বিসর্জন করিতে হয়, তাহাতেও তিনি পরায়ুখ নছেন। তাই সীতা অশ্রপূর্ণলোচনে লক্ষ্মণকে বলিলেন “স্ত্রীলোকের পতিই পরম দেবতা, পতিই বন্ধু এবং পতিই গুরু ; অতএব তুচ্ছ প্রাণ দিলেও যদি পতির মঙ্গল হয়, স্ত্রীলোকের তাহাই কর্তব্য ।” (২০৩ পৃ: ) সীতা দেহসম্বন্ধে স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত হইলেও, আত্মাতে র্তাহার সহিত অবিযুক্ত রছিলেন। এজন্মে সীতা স্বামিসহবাসমুখ লাভ করিলেন না বটে, কিন্তু যাহাতে পরজন্মে আর র্তাহার সহিত বিপ্রয়োগ না ঘটে, তজ্জন্ত তিনি ঘোরতর তপস্তা করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইলেন। অন্তর্নিহিত তেজপুঞ্জ আবার সুর্য্যপ্রভার ন্যায় প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল । সীতার হৃদয়মধ্যে স্বামিসম্বন্ধে যে সামান্য বাসনা লুক্কায়িত ছিল, সেই প্রদীপ্ত তেজে তাহ ভস্মীভূত হইয়া গেল। বিশ্ব সংসার এখন সীতার চক্ষে জ্যোতিৰ্ম্মর, তন্মধ্যে কেবল রাম ও সীতা ; সাঁতা সেই প্রজাবৎসল অলোকসাধারণ দেবতার ধ্যানে নিমগ্ন। সীতা আজ প্রকৃতই তপস্বিনী ; পরমদেবতা পরমগুরু পতির চরণযুগল হৃদয়ে ধারণ করিয়া সীতা এই তপস্তায় দেহপাত করিতে প্রতিজ্ঞা করিলেন। দ্বাদশ বৎসর এইরূপে অতিবাহিত হইয়া গেল। লবকুশের পরিচয় পাইয়া রাম বিশুদ্ধস্বভাব সীতাকে পুনগ্রহণ করিতে অভিলায করিলেন ; কিন্তু সাধারণের প্রত্যয়ের নিমিত্ত র্তাহাকে সভামধ্যে স্বীয় চরিত্র উদ্দেশে শপথ করিত হইবে । বাল্মীকি সীতাকে রামের অভিপ্রায় জ্ঞাপন করিলেন। সীতা পরমদেবতার আদেশ লঙ্ঘন করিলেন না। অলৌকিকজ্যোতিৰ্ম্ময়ী দেবী জানকী বাল্মীকির পশ্চাৎ পশ্চাৎ সভাগৃহে প্রবেশ করিলেন। তাহাকে দেখিবামাত্র লঘুচেত৷ ক্ষুদ্রমন প্রজাবৰ্গ লজ্জায় অধোবদন হইয়া রহিল ; সেই মূৰ্ত্তিমতী পবিত্রতার উপস্থিতি মাত্রে তাহাদের হৃদয় কম্পিত ও দেহ রোমাঞ্চিত হইল । রাম সীতাকে স্বীয় চরিত্র উদ্দেশে শপথ করিতে
পাতা:সীতা (অবিনাশ চন্দ্র দাস).djvu/২৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।