পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলা সাহিত্যের একটি প্রিয়তম নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য। বাঙালীর ঘরে ঘরে নিঃসন্দেহে একটি প্রিয়তম গ্রন্থ হবে ‘সুকান্ত-সমগ্র’। সুকান্তর সব লেখা একত্রে পাওয়ার বাসনা আমাদের বহু দিনের এবং বহু জনের। এতদিনে সে আকাঙ্ক্ষা মিটিয়ে সারস্বত লাইব্রেবী আমাদেব ধন্যবাদার্হ হলেন।

আমি জানি, কাজটা সহজ ছিল না। লেখাগুলো ছিল নানা জায়গায় ছডিয়ে ছিটিয়ে। ক্রমে ক্রমে সেসব প্রকাশকের হাতে আসতে সময় লেগেছে। সব যে নিঃশেষে পাওয়া গেছে, আমাদের নজর এড়িয়ে কোথাও যে পড়ে নেই–এখনও খুব জোর করে সে কথা বলা যায় না। সুকান্তর লেখা উদ্ধারের কাজে কত জন যে কতভাবে সাহায্য করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। ‘সুকান্ত-সমগ্র’ আসলে নানা দিক থেকে নানা লোকের সাহায্যের যোগফল।

লেখা পাওয়ার পর দেখা দিয়েছে আরেক সমস্যা।

কোনো কোনো লেখা পাওয়া গেছে ছাপার হরফে, কোনোটা বা হাতের লেখায়। কখনও ছাপানো লেখাকে, কখনও বা পাণ্ডুলিপিকে চূড়ান্ত ব'লে মানতে হয়েছে। কিন্তু ছাপানো লেখা আর তার পাণ্ডুলিপিতে যদি অমিল থাকে? ঢালাওভাবে সেই অসামঞ্জস্যকে ছাপার ভুল বলে মানা হবে? বদলটা প্রেস-কপিতেও হয়ে থাকতে পারে। কাজেই ছাপার হরফে আর পাণ্ডুলিপিতে গরমিল হলে সেটা লেখকের ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, অভিপ্রেত না অনভিপ্রেত, এ বিষয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। যে পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে, তাও যে লেখাটির প্রাথমিক খসড়া নয়—সেটা যে প্রেস-কপির হুবহু নকল—তাই বা জোর ক'রে কিভাবে বলা যাবে। তাছাড়া লেখার ভুলে পাণ্ডুলিপিতেও অনেক সময় গোলমাল থাকে; বানানের অনিয়ম ছাড়াও যতি চিহ্নের অসতর্কতায় পাঠকের ভুল বুঝবার আশঙ্কা থেকে যায়।

সুতরাং যদ্দৃষ্টং তন্মুদ্রিতং করা সর্বক্ষেত্রে সম্ভব হয় নি। বানানে সমতা আনবার চেষ্টা করতে হয়েছে, যতি চিহ্নের ব্যাপারে জায়গায় জায়গায় হস্তক্ষেপের দরকার হয়েছে এবং মুদ্রিত আর পাণ্ডুলিপিগত অসামঞ্জস্যের ক্ষেত্রে দুটোর একটিকে বেছে নিতে হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভালো, এর কোনোটাই অনড় অচল ব্যবস্থা নয় – পরে প্রয়োজনবোধে রদবদল হ’তে পারে।