এর চেয়েও জটিল আরেকটি সমস্যা আছে। সে সম্বন্ধে আজকের পাঠকদের অবহিত করতে চাই। সমস্যাটি সাধারণভাবে লেখার নির্বাচন সংক্রান্ত।
মাত্র একুশ বছর সুকান্ত পৃথিবীতে বেঁচে ছিল। আবির্ভাবের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্য সুকান্তকে আশ্চর্য প্রতিভা ব’লে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু ঠিক বিকশিত হওয়ার মুখেই সেই আশ্চর্য প্রতিভাকে আমরা হারিয়েছি।
বয়স বাড়লে নিজেদের কম বয়সের লেখা সম্বন্ধে লেখকেরা স্বভাবতই খুব খুঁতখুঁতে হন। অনেকের কাঁচা বয়সের লেখার কথা তো পরে আমরা জানতেও পারি না। অথবা জানলেও, তাদের পাকা হাতের লেখাগুলো সংখ্যায় আর পরিমাণে তাঁদের কাঁচা হাতের লেখাগুলোকে ঢেকে দিতে পারে।
সুকান্ত সেদিক থেকে সত্যিই মন্দভাগ্য। অকালমৃত্যু সুকান্তকে বাংলা সাহিত্যে শুধু বিপুলতর গৌরব লাভের সুযোগ থেকেই বঞ্চিত করে নি সেই সঙ্গে লেখার সংখ্যায় আর পরিমাণে পরিণতির চেয়ে প্রতিশ্রুতির পাল্লাই ভারী করেছে।
বেঁচে থাকলে সুকান্তর কিছু লেখা যে ‘সুকান্ত-সমগ্র’তে স্থান পেত না, তাতে আমার সন্দেহ নেই। বাংলা সাহিত্যে আমি ছিলাম সুকান্তর অগ্রজ; তার কবিমনের অনেক কথাই আমার জানা ছিল। তার কবিতা যখন নতুন মোড় নিচ্ছিল, তখনই দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা তাকে হারিয়েছি। সুকান্তর যে সব কবিতা পড়ে আমরা চমকাই, সুকান্তর পক্ষে সে সবই আরম্ভ মাত্র।
সুকান্তর যখন বালক বয়স, তখন থেকেই তার কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয়।
আমি তখন স্কটিশ চার্চ কলেজে বি-এ পড়ছি। ‘পদাতিক’ বেরিয়ে তখন পুরনো হয়ে গেছে। রাজনীতিতে আপাদমস্তক ডুবে আছি। ক্লাস পালিয়ে বিডন স্ট্রীটের চায়ের দোকানে আমাদের আড্ডা। কলেজের বন্ধু মনোজ একদিন জোর ক’রে আমার হাতে একটা কবিতার খাতা গছিয়ে দিল। প’ড়ে আমি বিশ্বাসই করতে পারি নি কবিতাগুলো সত্যিই তার চৌদ্দ বছর বয়সের খুড়তুতো ভাইয়ের লেখা। শুধু আমি কেন, আমার অন্যান্য বন্ধুরা, এমন কি বুদ্ধদেব বসুও কবিতার সেই খাতা প’ড়ে অবাক না হয়ে পারেন নি।
আমার সন্দেহভঞ্জন করবার জন্যেই বোধহয় মনোজ একদিন কিশোর