সুকান্তকে সেই চায়ের দোকানে এনে হাজির করেছিল। সুকান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে তার কবিত্বশক্তি সম্বন্ধে সেদিন কেন আমি নিঃসংশয় হয়েছিলাম, সে বিষয়ে কেউ যদি আমাকে জেরা করে আমি সদুত্তর দিতে পারব না।
সে সব কবিতা পরে ‘পূর্বাভাস'-এ ছাপা হয়েছে। তাতে কী এমন ছিল যে, প'ড়ে সেদিন আমরা একেবারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম? আজকের পাঠকেরা আমাদের সেদিনকার বিস্ময়ের কারণটা ধরতে পারবেন না। কারণ, বাংলা কবিতার ধারা তারপর অনেকখানি ব’য়ে এসেছে। কোনো কিশোরের পক্ষে ঐ বয়সে ছন্দে অমন আশ্চর্য দখল, শব্দের অমন লাগসই ব্যবহার সেদিন ছিল অভাবিত। হালে সে জিনিস প্রায় অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।
জীবনের অভিজ্ঞতাকে ক্ষমতায় বেঁধে সুকান্ত যখন কবিতার বিদ্যুৎশক্তিকে কলকারখানায় খেতে খামারে ঘরে ঘরে সবে পৌছে দিতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই মৃত্যু তাকে কেড়ে নিয়ে গেল। আরম্ভেই সমাপ্তির এই শোকে বাংলা সাহিত্য চিরদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলবে।
সুকান্ত বেঁচে থাকতে তার অনুরাগী পাঠকদের মধ্যে আমার চেয়ে কড়া সমালোচক অপর কেউ ছিল কিনা সন্দেহ। এখন ভেবে খারাপ লাগে। সামনাসামনি তাকে কখনো আমি বাহবা দিই নি। তার লেখায় সামান্য ক্রটিও আমি কখনও ক্ষমা করি নি।
এ প্রসঙ্গ তুলছি স্মৃতিচারণার জন্যে নয়। পাঠকেরা পাছে বিচারে ভুল করেন, তার যুগ আর তার বয়স থেকে পাছে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন—সেইজন্যে গোড়াতেই আজকের পাঠকদের খানিকটা হুঁশিয়ার ক’রে দিতে চাই।
খুঁত ধরব জেনেও, নতুন কিছু লিখলেই সুকান্ত আমাকে একবার না শুনিয়ে ছাড়ত না। আমি তখন কবিতা ছেড়ে 'জনযুদ্ধ' নিয়ে ডুবে আছি। অফিসে ব’সে কথা বলবারও বেশি সময় পেতাম না। আমাদের অধিকাংশ কথাবার্তা হত সভায় কিংবা মিছিলে যাতায়াতের রাস্তায়। ‘কী নিয়ে লিখব?'—এটা কখনই আমাদের আলোচনার বিষয় হত না। 'কেমন ক’রে লিখব?'—এই নিয়েই ছিল আমাদের যত মাথাব্যথা।
কিশোর বাহিনীর আন্দোলনে সুকান্তকে টেনে এনেছিল তখনকার
পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।