পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সিগন্যাল সাহেব বলল: মানুষ-মজুর আর আমাদের বড়বাবু ইঞ্জিন মশাইরা তবু কিছু খেতে পান। আমরা কিছুই পাই না, আমরা খাঁটি মজুর। হরতাল হলে আমি আর রাস্তার পুলিশের মতো হাত ওঠান-নামান মানবো না; চোখ বন্ধ করে হাত গুটিয়ে পড়ে থাকব।

 লাইন ক্লিয়ার করা যন্ত্রের হাতল বলল: আমরাও হরতাল করব। হরতালের সময় হাজার ঠেলাঠেলিতেও অমিরা নড়ছি না। দেখি কি করে লাইন ক্লিয়ার হয়।

 লাইনেরা বলল: ঠিক্ ঠিক্, আমরাও নট নড়ন-চড়ন, দাদা।

 ইসটিশানের ঘণ্টা বলল: সে সময় আমায় খুঁজেই পাবে না কেউ। ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়াব। লাল-সবুজ নিশান বন্ধুরাও আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। ট্রেন ছাড়বে কি করে?

 সভাপতি ইঞ্জিন মশাই বললেন: আমাকে বড়বাবু ইঞ্জিন মশাই বলে অরি সম্মান করতে হবে না। আমি তোমাদের, বিশেষ করে আমার অধীনস্থ কর্মচারী চাকাদের কথা শুনে এতই উৎসাহিত হয়েছি যে আমি ঠিক করেছি অনশন ধর্মঘট করব। এক টুকরো কয়লাও আমি খাব না, তাহলেই সব অচল হয়ে পড়বে।

 এদিকে কতকগুলো ইসটিশানের ঘড়ি আর বাঁশি এসেছিল কর্তাদের দালাল হয়ে সভা ভাঙবার জন্যে। সভায় কাজ ঠিক মতো হচ্ছে দেখে বাঁশিগুলো টিক্ টিক্ করে টিট্কিরী মেয়ে হট্টগোল করতে লাগল। অমনি সবাই হৈ হৈ করে তেড়ে মেড়ে মারতে গেল ঘড়ি আর বাঁশিদের। ঘড়িরা আর কী করে, প্রাণের ভয়ে তাড়াতাড়ি ছ'টা বাজিয়ে দিল। অমনি সূর্য উঠে পড়ল। দিন হতেই সকলে ছুটে চলে গেল যে যার জায়গায়। সভা আর সেদিন হল না।

২৫৪