একদিন বৃদ্ধের কানে এল? ফেণীতে যে আবার বোমা পড়ছে, ত্রিলোচন—
উত্তরে আর একটি লোকের গলা শোনা যায়: বল কী হে, ভাবনার কথা—
দ্বিতীয় ব্যক্তির দুশ্চিন্তা দেখা দিলেও অন্ধ বৃদ্ধের মনে কোনো চাঞ্চল্য দেখা দিল না। তার কারণ সে নির্ভীক নয়, সে অজ্ঞ। কিন্তু সে যখন শুনল:
—ঘনশ্যামের বৌ চাল কিনতে গিয়ে চাল না পেয়ে জলে ডুবে মরেছে, সে-খবর শুনেছ শচীকান্ত?
তখন শচীকান্তের চেয়ে বিস্মিত হল সে। শূন্য কাপড় হাতড়ে হাতড়ে দুদিনকে মর্মে মর্মে অনুভব করে বৃদ্ধ, আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে অনেক বেশী ক্লান্ত করে তোলে; প্রতিদিন।
তারপর একদিন দেখা গেল বৃদ্ধ তার নীরবতা ভঙ্গ করে ক্ষীণ, কাতর স্বরে চিৎকার করে ভিক্ষে চাইছে আর সেই চিৎকার আসছে ক্ষুধার যন্ত্রণায় বিকৃত হয়ে। সেই চিৎকারে বিরক্ত হয়ে কেউ কিছু দিল, আর কেউ বলে গেল:
—নিজেরাই খেতে পাই না, ভিক্ষে দেব কী করে?
একজন বলল: আমরা পয়সা দিয়ে চাল পাই না, আর তুমি বিনি পয়সায় চাল চাইছ? বেশ জোচ্চুরি ব্যবসা জুড়েছ, বাবা!
আবার কেউ বলে গেল: চাইছ একটা পয়স, কিন্তু মনে মনে জানো এক পয়সা মিলবে না, কাজেই ডবল পয়সা দেবে, বেশ চালাক যা হোক!
এইসব কথা শুনতে শুনতে সেদিন কিছু পয়সা পাওয়া গেল এবং অনেকদিন পর এই রোজগার তার মনে ভরসা আর আনন্দ এনে দিল। কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত প্রতীক্ষার পরও সেইদিন আর সেই কোমল হাত তার হাতে ধরা দিল না। দুর্ভাবনায় আর উৎকণ্ঠায় বহু সময়