পয়সা- আরো পয়সা; একটি লোককে, একটি মালকেও সে ছাড়বে না বিনা পয়সায়।
অথচ দু’মাস আগেও সুরেন ছিল সামান্য লেখাপড়া-জানা ভদ্রলোকের ছেলে। দু’মাস আগেও সে বাসে চড়েছে কণ্ডাক্টার হয়ে নয়, যাত্রী হয়ে। দু’মাসে সে বদলে গেছে। খাকির জামার নীচে ঢাকা পড়ে গেছে ভদ্রলোকের চেহারাটা। বাংলার বদলে হিন্দি বুলিতে রয়েছে অভ্যস্ত। হাতের রিস্টওয়াচটাকে তবুও সে ভদ্রলোকের নিদর্শন হিসাবে মনে করে; তাই ওটা নিয়ে তার একটু গর্বই আছে। যদিও কণ্ডাক্টারী তার সয়ে গেছে, তবুও সে নিজেকে মজুর বলে ভাবতে পারে না। ঘামে ভেজা খাকির জামাটার। মতোই অস্বস্তিকর ঐ ‘মজুর’ শব্দটা।
—এই কণ্ডাক্টার, বাঁধে, বাঁধো। একটা অতিব্যস্ত প্যাসেঞ্জাব উঠে দাড়াল। তবুও সুরেন নির্বিকার। বাস স্টপেজ’ ছাডিয়ে চলে যাচ্ছে। লোকটি খাপ্পা হয়ে উঠল: কী শুনতে পাওনা না কি তুমি?
সুরেনও চোখ পাকিয়ে বলল: আপনি ‘তুমি’ বলছেন কাকে?
—তুমি বলব না তো কি হুজুর বলব? লোকটি রাগে গজগঞ্জ করতে করতে রাস্তায় লাফিয়ে পড়ল। প্যাসেঞ্জারদেরও কেউ কেউ মন্তব্য করল: কণ্ডাক্টাররাও আজকাল ভদ্দরলোক হয়েছে, কালে কালে কতই হবে।
একটি পান-খেকো লুঙ্গিপরা লোক, বোধ হয় পকেটমার, হেসে কথাটা সমর্থন করল। বলল: মার না খেলে ঠিক থাকে না শালারা, শালাদের দেমাক হয়েছে আজকাল
আগুন জ্বলে উঠল সুরেনের চোখে। নাঃ, একদিন নির্ঘাৎ মারামারি হবে।•••একটা প্যাসেঞ্জার নেমে গেল। ধাই-ধাই বাসের গায়ে দু’তিনটে চাপড় মেরে চেঁচিয়ে উঠল সুরেন: যা-ওঃ। রাগে গরগর করতে করতে সুরেন ভাবল: ওঃ, যদি মামা তাকে না তাড়িয়ে