গৌরীও রয়েছে এদের সঙ্গে। সুরেনের বুকের ভিতরটা ধ্বক-ধ্বক কাপতে লাগল বাসের ইঞ্জিনটার মতো। ভাড়াটেবাবু সুরেনকে এক নজর দেখে নিলেন। তাঁর বাচ্চা ছেলে-মেয়ে দুটো হৈ-চৈ বাঁধিয়ে দিল: মা, মা, আমাদের সুরেন-দা, ‘ঐ দ্যাখো সুরেন-দা। কী মজা! ও সুরেন-দা, বাড়িতে যাওনা কেন? এ্যাঁ?
গাড়ি শুদ্ধ লোকের সামনে সুরেন বিব্রত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ টিকিট দিতেই মনে রইল না তার। ভদ্রলোক ধমকে নিরস্ত করলেন তার ছেলেমেয়েদের। কেমন যেন গোলমাল হয়ে গেল সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেল সুরেনের হাক ডাক। একবার আড়চোখে তাকাল সে গৌরীর দিকে—সে তখন রাস্তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। আস্তে আস্তে সে বাকী টিকিটের দামগুলো সংগ্রহ করতে লাগল। বাসের একটানা উ-উ-উ শব্দকে এই প্রথম তার নিজের বুকের আর্তনাদ বলে মনে হল। কনডাকটারীর দুঃসহ গ্লানি ঘাম হয়ে ফুটে বেরুল তার কপালে। |
গৌরীর বিমুখ ভাব সুরেনের শিরায় শিরায় বইয়ে দিল তুষারের ঝড়; দ্রুত, অত্যন্ত দ্রুত মনে হল বাসের ঝাঁকুনি-দেওয়া গতি। বহুদিনের রক্ত-জল-করা পরিশ্রম আর আশা চূড়ান্ত বিন্দুতে এসে কাপতে লাগল স্পিডোমিটারের মতো। একটু চাহনি, একটু পলকফেলা আশ্বাস, এরই জন্যে সে কাঁধে তুলে নিয়েছিল কণ্ডাক্টারের ব্যাগ। কিন্তু আজ মনে হল বাসের সবাই তার দিঁকে চেয়ে আছে, সবাই মৃদু মৃদু হাসছে, এনন কি গৌরীর বাবাও। ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা হল সুরেনের টাকাকড়ি-শুদ্ধ কাঁধে ঝোলান ব্যাগটা।
ওরা নেমে যেতেই দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে ঘণ্টি মেরে দুর্বল করে হাঁকল: যা-ওঃ। কিন্তু 'ঠিক হ্যায়’ সে বলতে পারল না। কেবল বার বার তার মনে হতে লাগল; নেহি, ঠিক নেহি হ্যায়।