পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কখম নিরুদ্দেশ হইল—তাহাকে ডাকিয়া ডাকিয়া আমাদের গলা ফাটিয়া গেল, তবু তাহার সাড়া পাইলাম না । সোমবার স্কুলে আসিয়াই আমরা হা হা করিয়া পালোয়ানকে ঘিরিয়া ফেলিলাম, কিন্তু সে যে কিছুমাত্র লজ্জিত হইয়াছে, তাহাকে দেখিয়া এমন বোধ হইল না । সে খুব বোলচাল দিয়া লম্বা বক্তৃতা করিয়া বলিল, “তোরা যে এমন আনাড়ি, তা জানলে কি আমি তোদের সঙ্গে যাই ? আচ্ছা, গোবরা যখন তোর টুটি চেপে ধরল, তখন আমি যে ডানপটকান দে’ বলে এত চেচালাম-কই, তুই তো তার কিছুই করলি না । আর ঐ গুপেটা, ওকে আমি এতবার বলেছি যে ল্যাংমুচকি মারতে হলে পালটা রোখ সামলে চলিস—তা তো ও শুনবে না । এরকম করলে আমি কি করব বল ? ও-সব দেখে আমার একেবারে ঘেন্না ধরে গেল—তাই বিরক্ত হয়ে চলে এলুম। তার পর ভুতোটা, ওটা কি করল বল দেখি । আরে, দেখছিস যখন দোরোখা প্যাচ মারছে, তখন বাপু আহ্লাদ করে কাত হয়ে পড়তে গেলি কেন ?” ভূতো এতক্ষণ কিছু বলে নাই, কিন্তু পালোয়ানের এই টিপপনি কাটা-ঘায়ে নুনের ছিটার মতো তাহার মেজাজের উপর ছ্যাক করিয়া লাগিল । সে গলায় বাঁকড়া দিয়া মুখভঙ্গি করিয়া বলিল, “তুমি বাপু কানকাটা কুকুরের মতো পলাইছিলা ক্যান ?" সর্বনাশ ! পালোয়ানকে ‘কানকাটা কুকুর’ বলা । আমরা ভাবিলাম, "দেখ, বাঙাল মরে বুঝি এবার P পালোয়ান খুব গম্ভীর হইয়া বলিল, “দেখ বাঙাল ! বেশি চালাকি করিস তো চরকি প্যাচ লাগিয়ে একেবারে তুকি নাচন নাচিয়ে দেব ।” ভুতো বলিল, “তুমি নাচলে বান্দর নাচবা।” রাগে পালোয়ানের মুখ চোখ লাল হইয়া উঠিল। সে বেঞ্চি ডিঙাইয়া একেবারে বাঙালের ঘাড়ে গিয়া পড়িল । তার পর দুইজনে কেবল হুড়াহুড়ি আর গড়াগড়ি । আশ্চর্য এই, পালোয়ান এত যে কায়দা আর এত যে প্যাচ আমাদের উপর খাটাইত, নিজের বেলায় তার একটিও তাহার কাজে আসিল না। ঠিক আমাদেরই মতো হাত-পা ছুড়িয়া ,সে খামচাখামচি করিতে লাগিল । তার পর বাঙাল, যখন তাহার বুকের উপর চড়িয়া দুই হাতে তাহার টুটি চাপিয়া ধরিল, $ఏly সুকুমার সমগ্র রচনাবলী । ৭