পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নন্দ একটু অপ্রস্তুত হইল বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিল-ভাগ্যিস, তাহার সংস্কৃত পড়ার কথাটা ফাঁস হইয়া যায় নাই।

 দেখিতে দেখিতে বছর কাটিয়া আসিল-পরীক্ষার সময় প্রায় উপস্থিত। সকলে পড়ার কথা, পরীক্ষার কথা আর প্রাইজের কথা বলাবলি করিতেছে—এমন সময় একজন ছোকরা জিজ্ঞাসা করিল, “কি হে! নন্দ এবার কোন প্রাইজটা নিচ্ছ?” ক্ষুদিরাম নন্দর মতো গলা করিয়া, ঘাড় নাড়িয়া বলিল, “আজ্ঞে সংস্কৃত, না সংস্কৃত নয়।” সকলে হাসিল, নন্দও খুব হো হো করিয়া সেই হাসিতে যোগ দিল। মনে ভাবিল, ‘বাছাধন, এ হাসি আর তোমার মুখে বেশিদিন থাকছে না।'

 যথাসময়ে পরীক্ষা আরম্ভ হইল এবং যথাসময়ে শেষ হইল। পরীক্ষার ফল জানিবার জন্য সকলে আগ্রহ করিয়া আছে-নন্দও রোজ নোটিস বোর্ডে গিয়া দেখে, তাহার নামে সংস্কৃত প্রাইজ পাওয়ার কোনো বিজ্ঞাপন আছে কি না। তাহার পর একদিন হেডমাস্টার মহাশয় একতাড়া কাগজ লইয়া ক্লাশে আসিলেন, আসিয়াই তিনি গম্ভীরভাবে বলিলেন, “এবার দুয়েকটা নতুন প্রাইজ হয়েছে আর অন্য বিষয়েও কোনো কোনো পরিবর্তন হয়েছে।” এই, বলিয়া তিনি পরীক্ষার ফলাফল পড়িতে লাগিলেন। তাহাতে দেখা গেল ইতিহাসের জন্য কে যেন একটা রূপার মেডেল দিয়াছেন। ক্ষুদিরাম ইতিহাসে প্রথম হইয়াছে, সে-ই ঐ মেডেলটা পাইবে। সংস্কৃতে নন্দ প্রথম, ক্ষুদিরাম দ্বিতীয়—কিন্তু, এবার সংস্কৃতে কোনো প্রাইজ নাই।

 হায় হায়! নন্দের অবস্থা তখন শোচনীয়। তাহার ইচ্ছা হইতেছিল সে ছুটিয়া গিয়া ক্ষুদিরামকে কয়েকটা ঘুঁষি লাগাইয়া দেয়। তাহার এত চেষ্টার ফল কি না এই হইল। কে জানিত এবার ইতিহাসের জন্য প্রাইজ থাকিবে, আর সংস্কৃতের জন্য থাকিবে না। ইতিহাসের মেডেলটা সে তো অনায়াসেই পাইতে পারিত। কিন্তু তাহার মনের কষ্ট কেহ বুঝিল না—সবাই বলিল, “বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিড়েছে—কেমন করে ফাঁকি দিয়ে নম্বর পেয়েছে।” নন্দ দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়িয়া বলিল, “কপাল মন্দ!”

সন্দেশ-আশ্বিন, ১৩২৪


ডিটেক্‌টিভ

 জলধরের মামা পুলিসের চাকরি করেন, আর তার পিসেমশাই লেখেন ডিটেক্‌টিভ উপন্যাস। সেইজন্য জলধরের বিশ্বাস যে, চোর-ডাকাত, জাল-জুয়াচোর জব্দ করবার সবরকম সংকেত সে যেমন জানে, এমনটি তার মামা আর পিসেমশাই ছাড়া কেউ জানে না। কারও বাড়িতে চুরিটুরি হলে জলধর সকলের আগে সেখানে হাজির হয়; আর কে চুরি করল, কি করে চুরি হল, সে থাকলে অমন অবস্থায় কি করত এ-সব বিষয়ে খুব বিজ্ঞের মতো কথা বলতে থাকে। যোগেশবাবুর বাড়িতে যখন বাসন চুরি হল, তখন জলধর তাদের বলল, “আপনারা এইটুকু সাবধান হতে জানেন না—চুরি তো হবেই। দেখুন তো ভাঁড়ার ঘরের পাশেই অন্ধকার গলি, তার ওপর জানলার গরাদ নেই। একটু

১২৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২