পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কলকে থেকে খানিকটা টিকে গেল মাটিতে পড়ে। বৃদ্ধ তখন ব্যস্ত হয়ে হাতের কাছে কিছু না পেয়ে, ব্যোমকেশের সেই মাঞ্জা মাখানো কাগজটা দিয়ে টিকেটাকে তুলতে গেলেন।

 সর্বনাশ। যেমন টিকের ওপর কাগজ ছোঁয়ানো, অমনি কিনা ভস্ভস্ করে কাগজ জ্বলে উঠে ভদ্রলোকের আঙুল-টাঙুল পুড়ে, বারান্দার বেড়ায় আগুন-টান লেগে এক হলুস্থূল কাণ্ড। অনেক চেঁচামেচি, ছুটোছুটি আর জল ঢালাঢালির পর যখন আগুনটুকু নিভে এল, আর ভদ্রলোকের আঙুলের ফোস্কায় মলম দেওয়া হল, তখন তার দাদা এসে তার কান ধরে বললেন, “হতভাগা! কি রেখেছিলি কাগজের মধ্যে বল তো?” ব্যোমকেশ কাঁদ-কাঁদ হয়ে বললে, “কিছু তো রাখি নি, খালি সুতোর মাঞ্জা রেখেছিলাম।” দাদা তার কৈফিয়তটা নিতান্তই আজগুবি মনে করে, “আবার এয়ার্কি হচ্ছে?” বলে বেশ দু-চার ঘা কষিয়ে দিলেন। বেচারা ব্যোমকেশ এই বলে তার মনকে খুব খানিক সান্ত্বনা দিল যে, আর যাই হোক, তার সুতোটুকু রক্ষা পেয়েছে। ভাগ্যিস সে সময়মতো খুলে এনেছিল, নইলে তার সুতোও যেত, পরিশ্রমও নষ্ট হত।

 বিকেলে সে বাড়ি এসেই চটপট ঘুড়ি আর লাটাই নিয়ে ছাতের উপর উঠল। মনে মনে বলল, ‘ডাক্তারের পো আজ একবার অসুক-না, দেখিয়ে দেব প্যাঁচ খেলাটা কাকেবলে।’ এমন সময়ে পাঁচকড়ি এসে বড়ো-বড়ো চোখ করে বলল, “শুনেছিস?” ব্যোমকেশ বললে, “না-কি হয়েছে?” পাঁচু বললে, “ওদের সেই ছেলেটাকে দেখে এলুম, সে নিজে নিজে দেশলাইয়ের মসলা বানিয়েছে, আর চমৎকার লাল নীল দেশলাই তৈরি করেছে।” ব্যোমকেশ হঠাৎ লাটাই-টাটাই রেখে, এত বড়ো হাঁ করে জিজ্ঞেস করল, “দেশলাই কিরে। মাঞ্জা বল?” শুনে পাঁচু বেজায় চটে গেল, “বলছি লাল নীল আলো জ্বলছে, তবু বলবে মাঞ্জা, আচ্ছা গাধা যা হোক।”

 ব্যোমকেশ কোনো জবাব না দিয়ে, দেশলাইয়ের মসলা মাখানো সুতোটার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। সেই সময়ে ডাক্তারদের বাড়ি থেকে লাল রঙের ঘুড়ি উড়ে এসে ঠিক ব্যোমকেশের মাথার উপরে ফরফর করে তাকে যেন ঠাট্টা করতে লাগল। তখন সে তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল, বলল, “আমার অসুখ করেছে।”

সন্দেশ—চৈত্র, ১৩২৬


আজব সাজা

 “পণ্ডিতমশাই, ভোলা আমায় ভ্যাংচাচ্ছে।” “না, পণ্ডিতমশাই, আমি কান চুলকোচ্ছিলাম তাই মুখ বাঁকা মতন দেখাচ্ছিল।” পণ্ডিতমশাই চোখ না খুলিয়াই অত্যন্ত নিশ্চিন্তভাবে বলিলেন, “আঃ! কেবল বাঁঁদরামি! দাঁড়িয়ে থাক।” আধ মিনিট পর্যন্ত সব চুপচাপ। তার পরই আবার শোনা গেল, “দাঁড়াচ্ছিস না যে?” “আমি সাঁড়াব কেন? তোকেই তো দাঁড়াতে বলল।” “যাঃ আমায় বলেছে না আর কিছু। গণ্‌শাকে জিজ্ঞেস কর। কিরে গণ্‌শা, ওকে দাঁড়াতে বলেছে না?” গণেশের বুদ্ধি কিছু মোটা, সে আস্তে আস্তে উঠিয়া গিয়া পণ্ডিত-

১৪০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী: ২