একজন লোককে তাহার বয়স জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল। সে তৎক্ষণাৎ কাগজ পেনসিল লইয়া হিসাব করিয়া বলিল, “আঠারো বৎসর তিন মাস ষোলো দিন চার ঘণ্টা—কত মিনিট ঠিক বলতে পারলাম না।” যিনি প্রশ্ন করিয়াছিলেন তিনি তো উত্তর শুনিয়া চটিয়াই লাল। বাস্তবিক, আমাদের সকল কাজের যদি এরকম চুলচেরা সুক্ষ হিসাব রাখিতে হইত, তবে হিসাবের খবর লইতেই সমস্ত জীবনটা কাটিয়া যাইত।
মনে কর বাহিরে ভয়ানক ঝড় বহিতেছে। একজন বলিল, “উঃ, ভয়ানক জোরে হাওয়া দিচ্ছে।” যিনি সক্ষম হিসাব চান তিনি তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞাসা করিবেন, “ভয়ানক জোরটা কিরকম জোর? ঘণ্টায় কত মাইল হিসাবে বাতাস চলছে? একদিকেই যাচ্ছে, না দিক বদলাচ্ছে? কিরকমভাবে বাড়ে কমে?” ইত্যাদি। যাঁহারা মেঘ বৃষ্টি বাতাস লইয়া আলোচনা করেন তাহারা এইরকম সব খবর সংগ্রহ করিবার জন্য নানারকম সূক্ষ-সুক্ষ কল ব্যবহার করেন। বাহিরে খুব একচোট বৃষ্টি হইয়া গেল। লোকে দেখিয়া বলিল, “বাস রে, কি ঝমাঝম বৃষ্টি।” কিন্তু আমাদের সক্ষম হিসাবী পণ্ডিত হয়তো বলবেন, “এই বৃষ্টিকে যদি সমানভাবে মাটির উপর ধরিয়া রাখা যাইত তবে ঠিক এক ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি জল দাঁড়াইত।”
শীত গ্রীষ্ম বুঝাইবার জন্য আমরা কতখানি ঠাণ্ডা বা কতখানি গরম তাহাও ভাষায় কতকটা বলিতে চেষ্টা করি—যেমন, ‘শীতে হাড় জমে গেল। বড়ো শীত। বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। একটু যেন গরম। বেশ গরম; ভয়ানক গ্রীম উঃ, গরমে গা ঝলসে গেল ইত্যাদি। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতের কাছে যাও, তিনি চট করিয়া বলিয়া দিবেন আর এত ‘ডিগ্রী’ ঠাণ্ডা হইলেই বরফের মতো ঠাণ্ডা হইবে’ বা ‘আর এত “ডিগ্রী গরম বাড়িতে ফুটন্ত জলের মতো গরম হইবে।' এক ঘটি ঠাণ্ডা জল রহিয়াছে, তুমি তাহাতে এক ফোঁটা গরম জল ফেলিয়া দাও-কোনো তফাত বুঝিতে পারিবে না। কিন্তু এমন যন্ত্র আছে যাহা দ্বারা পরীক্ষা করিয়া পণ্ডিতেরা তৎক্ষণাৎ বলিয়া দিতে পারিবেন, এই জলটা একটু গরম হইল।' এখন হইতে পঞ্চাশ হাত দূরে একটা বাতি জালিয়া রাখ আর এখানে বসিয়া যন্ত্রের মুখ তাহার দিকে ফিরাইয়া দাও। অমনি দেখিবে, কলের মধ্যে সুক্ষ কাঁটা সেই গরমেই চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে।