পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রকম শিকারী গাছ আছে, তাহাদের শিকার ধরিবার জন্য থলি বা চোঙা থাকে। এই থলি বা চোঙার মধ্যে পোকা বেশ সহজেই ঢুকিতে পারে কিন্তু বাহির হওয়া তত সহজ নয়। ইহাদের ভিতর সরু সরু কাঁটা থাকে—সেগুলির মুখ সব নীচের দিকে, আর তার গায়ে মোমের মতো একরকম কি মাখানো থাকে, তাহাতে পোকাগুলি বেশ সহজেই সুড় সুড়, করিয়া পিছলাইয়া নামিতে পারে। কিন্তু উপরে উঠিবার সময় তো আর পিছলাইয়া উঠা যায় না—তা ছাড়া কাঁটার খোচাও যথেস্ট খাইতে হয়। এই-সকল থলির তলায় প্রায়ই জল জমিয়া থাকে, পোকা যখন বারবার পলাইবার চেষ্টা করিয়া হয়রান হইয়া পড়ে, তখন সে ঐ জলের মধ্যে পড়িয়া মারা যায়। এই-সকল গাছে পোকাকে ফাঁকি দিবার এতরকম উপায় থাকে যে ভাবিলে অবাক হইতে হয়। কোনোটার মুখে ঢাকনি থাকে, সে ঢাকনির উপর হইতে চাপ দিলে খুলিয়া যায়। কিন্তু ভিতর হইতে ঠেলিলে খোলে না। প্রায় সবগুলিরই মুখের কাছে খুব সুন্দর রঙিন কাজ আর তার চারিদিকে মধু। সেই মধু খাইতে খাইতে পোকা ভিতরের দিকে ঢুকিতে থাকে—যত খায় তত মিষ্টি। শেষে এক জায়গায় গিয়া দেখে তাহার পরে আর মধু নাই-তখন সে ফিরিতে চায়,! কিন্তু ফিরিতে আর পারে না। কোনো কোনো থলির ভিতরে খানিকটা জায়গা স্বচ্ছ মতন—! ঠিক যেন শার্শী। পোকাগুলি মনে করে এই পলাইবার পথ—আর ক্রমাগত সেই শার্শীর গায়ে উড়িয়া উড়িয়া হয়রান হইয়া পড়ে। কখনো কখনো এমনও হয় কোনো ছোটো পাখি বা ইঁদুর হয়তো জল খাইতে আসিয়া ফাঁদের মধ্যে পড়িয়া যায় এবং আর বাহির হইতে না পারিয়া প্রাণ হারায়!

সন্দেশ —চৈত্র, ১৩২০
কাগজ

 এমন সময় ছিল যখন মানুষ লিখিতে শিখিয়াছে, কিন্তু কাগজ বানাইতে শিখে নাই। কোনো কোনো দেশে তখন পাথরে খোদাই করিয়া লিখিবার রীতি ছিল। কেহ-বা নরম মাটিতে লিখিয়া সেই মাটি পরে পোড়াইয়া ইঁটের টালি বানাইয়া লইত। সেই ইঁটেতেই তাহাদের কাগজের কাজ চলিয়া যাইত। কিন্তু এইরূপ ইঁটের টালি নিয়া লেখাপড়া করা যে বিশেষ অসুবিধার কথা তাহা সহজেই বুঝিতে পার। মনে কর কোনো ছাত্র পাঠশালায় যাইতেছে। অমনি তাহার সঙ্গে সঙ্গে তিনঝুড়ি ইঁটের পুঁথি চলিল—আর লিখিবার জন্য একতাল কাদা। সামান্য কয়েকখানা চিঠি পাঠাইতে হইলেই প্রাণান্ত পরিশ্রম-মাটি আনো রে, জল আনো রে, ঠাসিয়া কাদা করো রে, চৌকস করো রে, টালি বানাও রে, তবে তাহাতে অক্ষর লেখো রে, পোড়াও রে, ঠাণ্ডা করো রে, মুটে ডাকো রে— হাঙ্গামের আর অন্ত নাই।

 ইহার চাইতে আমাদের দেশে যে গাছের পাতায় লেখার রীতি অনেকদিন চলিয়া আসিয়াছে সেটা অনেক সহজ এবং সুবিধাজনক। ছয়হাজার বছর আগে ইজিপেট 'পেপিরাস’

১৫০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২