পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মাতালের মতো টলিতে টলিতে গব্গব্ করিয়া জল খাইতে লাগিল, তার পর মাথা নিচু করিয়া ডিগবাজী খাইয়া দেখিতে দেখিতে এত বড়ো জাহাজটা ডুবিয়া গেল।

 ডুবুরী কিন্তু সেখানে দাঁড়াইয়া থাকে নাই—সে একেবারে ডুব মারিয়া প্রাণপণে ছুটিয়াছে। যতক্ষণ সে তাহার ‘চোখ’টুকু মাত্র বাহির করিয়া চোরের মতো আসিতেছিল শত্রুরা তাহাকে দেখিতে পারে নাই, কিন্তু টর্পিডো ছাড়িবামাত্র জল তোলপাড় হইয়া উঠিল –আর সকলেই বুঝিতে পারিল ‘ঐ ডুবুরী'। বিপক্ষের কামান হইতে একটি গোলা যদি ডুবুরীর ঘাড়ে পড়ে তবে আর তার রক্ষা নাই। শুধু যে যুদ্ধের সময়েই ডুবুরী জাহাজের বিপদের ভয় থাকে তাহা নয়। জলের পথে চলাফিরা করিতে গিয়া তাহার যে কত সময় কতরকম দুর্ঘটনা ঘটে ভাবিলেও ভয় হয়। জলের নীচ হইতে উঠিতে গিয়া হয়তো কোনো জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়া গেল। হয়তো কোনখানে এতটুকু ফাঁক কোথায় কলের কব্‌জা এতটুকু বেঠিক বসিয়াছে-আর অমনি জাহাজ বিগড়াইয়া একেবারে পাথরের মতো ডুবিয়া গেল—শত চেষ্টায়ও আর তাহাকে উঠানো গেল না। এরকম কতবার ঘটিয়াছে এবং কত লোক তাহাতে মারা গিয়াছে। জাহাজ ডুবিয়া গেল, ডুবুরী নামাইয়া দেখা গেল ভিতরে মানুষ বাঁচিয়া আছে, ঠক ঠক শব্দ করিলে তাহারা ভিতর হইতে সাড়া দেয়, অথচ তাহাদের বাঁচাইবার কোনো উপায় নাই। যাহাতে এরকম দুর্ঘটনা না হয়, তাহার জন্য প্রতি বৎসর কত নুতন নুতন বন্দোবস্ত করা হইতেছে এবং জাহাজ ডুবিলেও যাহাতে ভিতরের লোকেরা পলাইয়া আসিতে পারে তাহারও ব্যবস্থা হইতেছে।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২১


পাতাল পুরী

 পাতাল দেশটা কোথায় তাহা আমি জানি না। অনেকে বলেন আমেরিকার নামই পাতাল। সে যাহাই হউক, মোটের উপর পাতাল বলিতে আমরা বুঝি যে, আমাদের নীচে একটা কোনো জায়গা—আমরা এই যে মাটির উপর দাঁড়াইয়া আছি, তার উপরে যেন স্বর্গ আর নীচে যেন পাতাল!

 এখানে যে জায়গার কথা বলিতেছি সেটাকে পাতালপুরী বলা হইল এইজন্য যে সেটা মাটির নীচে। মাটির নীচে ঘরবাড়ি, মাটির নীচে রেলগাড়ি, মাটির নীচে হোটেল সরাই গির্জা—সমস্ত শহরটাই মাটির নীচে। শহরটা কিসের তৈয়ারি জান? নুনের! অসলে সেটা একটা নুনের খনি। অস্ট্রিয়ার কাছে—মাটির নীচে এই অদ্ভুত শহর। হাজার হাজার বৎসর লোকে এই খনিতে খুঁড়িয়া খুঁড়িয়া লবণ তুলিয়াছে। এখনো প্রতি বৎসর এই খনি হইতে প্রায় বিশ লক্ষ মণ লবণ বাহির হয়—কিন্তু তবু লবণ ফুরাইবার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। মাটির নীচে পঁচিশ মাইল চওড়া পাঁচশো মাইল লম্বা লবণের মাঠ। খুঁড়িয়া দেখা গিয়াছে একহাজার ফুটের নীচেও লবণ।

 খনির মধ্যে খানিকটা জায়গায় বড়ো সুরঙ্গ কাটিয়া পথঘাট করা হইয়াছে তাহার মাঝে

নানা নিবন্ধ
১৫৭