পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তুলবার আগে প্রায় একশো-দেড়শো হাত গর্ত কেটে ভিত খুড়তে হয়। যেখানে বাড়ি হবে, তার চারদিকে খুব মজবুত আর খুব উঁচু ‘কপিকল’ বসায়। সেই কলে বড়ো-বড়ো লোহার থাম চাপিয়ে থামগুলাকে হিসাবমতো ঠিক ঠিক জায়গায় বসানো হয়। তার পর থামের গায়ে লোহার কড়ি বরগা বসিয়ে সেগুলোকে পেরেক স্ক্রু দিয়ে এঁটে দেয়। এমনি করে সমস্ত বাড়িটার একটা কঙ্কাল আগে খাড়া করা হয়। তার পর ঢালাই করা পাথুরে মাটির দেওয়াল দিয়ে কঙ্কালটিকে ভরাট করে তাতে দরজা জানালা বসালে পর তখন সেটা বাড়ির মতো দেখতে হয়। যারা এই-সকল কাজ করে তাদের যে অনেকখানি সাহস দরকার তা বুঝতেই পার। মাটি থেকে চারশো হাত উপরে লোহার বরগার উপর দিয়ে হাঁটাহাটি করা—তার উপরে বসে কাজকর্ম করা, কখনো-বা উপর নীচ ওঠা নামা-এ-সব যেমন তেমন লোকের কাজ নয়।

সন্দেশ -মাঘ, ১৩২১

রাবণের চিতা

 লোকে বলে রাবণের চিতায় যে আগুন দেওয়া হয়েছিল সে আগুন নাকি এখনো নিভানো হয় নি এখনো তা জ্বলছে। কোথায় গেলে সে আগুন দেখা যায় তা আমি জানি না-কিন্তু এমন আগুন দেখা গেছে যা বছরের পর বছর ক্রমাগতই জ্বলছে। মানুষ তাতে জল ঢেলে মাটি চাপা দিয়ে নানারকমে চেষ্টা করেও তাকে নিভাতে পারে নি।

 খনি থেকে কয়লা এনে সেই কয়লা দিয়ে লোকে আগুন জ্বালায়। কিন্তু তা না করে যদি একেবারে খনির মধ্যেই আগুন ধরিয়ে খনিকে খনি জ্বালিয়ে দেওয়া যায় তবে কিরকম হয়? বাস্তবিকই এমন সব কয়লার খনি আছে যার আশেপাশে বারোমাসই আগুন জলে। সে-সব খনির লোকেরা সব সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকে-কখন সে আগুন খনির মধ্যে এসে পড়ে। কোনোদিকে যদি খনির দেয়াল একটু গরম হয় কিম্বা খনির কাছে কোনো জায়গা যদি বসে-যাবার মতো হয়, তবেই হৈচৈ লেগে যায়—‘অগুিন আসিছে, আগুন আসছে। খনির একদল লোক আছে তাদের কাজ কেবল আগুন তাড়ানো। যেদিক দিয়ে আগুন আসছে বোধ হয়, তারা সেইদিকে ইট পাথরের দেয়াল তুলে আগুনের পথ বন্ধ করে দেয়। আগুন তখন বাধ্য হয়ে আর কোনো দিক ঠেলে তার পথ করে নেয়। কেমন করে কোথা হতে আগুন আসে তা সব সময়ে বলা যায় না। মাটির নীচে হয়তো বিশ-পঁচিশ মাইল জায়গা জুড়ে কয়লার স্তর রয়েছে—কোথাও একশো হাত, কোথাও হয়তো পাঁচ হাত মাত্র পুরু। তারই কোনোখানে যদি কোনো গতিকে আগুন ধরে আর তার আশেপাশে পাহাড়ের ফাটলে যদি বাতাস যথেষ্ট থাকে—তবেই সে আগুন একেবারে 'রাবণের চিতা' হয়ে দাঁড়ায়।

 খোলা বাতাসে কয়লা যেমন ধু ধু করে জ্বলে যায়, মাটির নীচে তেমন হয় না—সেখানে আগুন যেন শামুকের মতো আস্তে আস্তে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে থাকে। যেদিকে তার পথ

১৬০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২