পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভয় তো আছেই। ডুবুরীরা হাঙরের চাইতেও ভয় করে ‘অক্টোপাস’কে। পিটার স্নেল একজন নামজাদা ডুবুরী ছিল। সে একবার জলে নামতেই একটা প্রকাণ্ড অক্টোপাস শুড়ের মতো আট পা বাড়িয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। ভয়ে স্নেল পাগলের মতো ছুরি চালাতে চালাতে তার দড়ি ধরে প্রাণপণে টানতে লাগল। অনেক টানাটানির পর যখন তাকে প্রায় আধমরা অবস্থায় উপরে তোলা হল, তখনো জানোয়ারটার কয়েকটা কাটা পা তার গায়ে লেগে ছিল। তার ওজন প্রায় আধ মণ।

 আর একটি জিনিস আছে যাকে ডুবুরী দিয়ে কুড়িয়ে এনে লোকে তার ব্যবসা করে। তাকে আমরা বলি ‘স্পঞ্জ’ (sponge)—সেই যে ফুটোওয়ালা নরম জিনিস যাতে জল শুষে নেয় আবার চাপ দিলে জল বেরিয়ে যায়। স্পঞ্জ জিনিসটা একরকম অদ্ভুত জলজন্তুর খোলস বা কঙ্কাল বা বাসা—যা ইচ্ছা বলতে পার। সমুদ্রের তলায় স্পঞ্জের দল সার বেঁধে মার্টি আঁকড়িয়ে পড়ে থাকে, ডুবুরীরা তাকে সেখান থেকে ছিনিয়ে আনে।

 রাউল নামে একজন লোক স্পঞ্জ তুলবার জন্য একরকম ডুবুরী গাড়ি তৈরি করেছেন। দুজন ডুবুরী তার মধ্যে স্বচ্ছন্দে বসতে পারে। স্পঞ্জ দেখবার জন্য গাড়ির সামনে একটা উজ্জ্বল আলো থাকে। গাড়ির নীচে চাকা আর পিছনে দুটা দাঁড়, তাতেই তার চলাফিরা চলে। আর সামনে ডাণ্ডার আগায় একটা হাঁ-করা মতন জিনিস আছে—তা দিয়ে স্পঞ্জ আঁকড়ে আনে।

 আজকাল ডুবুরীর পোশাকের নানারকম উন্নতি হয়েছে—কোনোটার পিঠে বাতাসের বন্দোবস্ত, তার আলাদা নল লাগে না। কোনোটার মধ্যে টেলিফোনের কল, উপরের সঙ্গে কথাবার্তা চলে—আর কোনোটার এমন সুবিধা আছে যে ডুবুরী ইচ্ছা করলে কারও সাহায্য ছাড়াই উপরে উঠতে পারে।

সন্দেশ-বৈশাখ, ১৩২২
ছাপাখানার কথা

 ছেলেবেলায় একটা ছাপাখানা দেখতে গিয়েছিলাম। দেখলাম একটা লোহার কল রয়েছে, সেটাকে তারা 'প্রেস’ বলে। তার পাশে একটা কালি-মাখানো টেবিল আর অন্য একটা টেবিলে একতাড়া কাগজ। প্রেসের সামনের দিকে একটা লোহার তার উপর অনেকগুলো উঁচু-উচু অক্ষর বসানো রয়েছে। একটা ছেলে একটা মোটা ‘রুল’ দিয়ে টেবিলের কালি নিয়ে সেই অক্ষরগুলোতে মাখাচ্ছে। আর একজন লোক সেই তক্তার সঙ্গে আঁটা একটা ফ্রেমের উপর কাগজ বসিয়ে, কাগজসুদ্ধ ফ্রেমটাকে মুড়ে সেই অক্ষরগুলোর উপর ফেলে দিচ্ছে। তার পর একটা হাতল ঘুরিয়ে সেইগুলোকে একেবারে প্রেসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আর একটা প্রকাণ্ড হাতল টেনে দিচ্ছে। তার পর হাতল ছেড়ে দেওয়া, তক্তা টেনে বার করা, কাগজ খুলে নেওয়া, আবার কালি দেওয়া, কাগজ দেওয়া, ইত্যাদি। এইরকম ক্রমাগত চলছে আর প্রত্যেকবার এক-একখানা ছাপা হচ্ছে। এমনি করে ঘণ্টায়

নানা নিবন্ধ
১৬৩