পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এঞ্জিন তৈরি হল, কত দিকে কত রেলের লাইন বসে গেল, গরিবের ছেলে স্টিফেনসন মস্ত ধনীলোক হয়ে গেলেন। কিন্তু জীবনের শেষপর্যন্ত তাঁর সাদাসিধা চালচলন আর সহজ সরল ব্যবহারের কোনো পরিবর্তন হয় নি। ফিটফেনসনের একমাত্র ছেলে রবার্টও কালে একজন নামজাদা এঞ্জিনিয়ার হয়েছিলেন: রেলের পোল তৈরি বিষয়ে তাঁর বিশেষ রকম সুনাম ছিল।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২৩


সূর্যের কথা

 সূর্যটা একটা গোল আগুনের পিণ্ড, এ কথা অমিরা সকলেই জানি। গোল, সেটা চোখেই দেখতে পারি—আর ‘আগুন’ কি না তা একটিবার দুপুর রোদে দাঁড়ালেই আর বুঝতে দেরি লাগে না। পণ্ডিতেরা বলেন, এই পৃথিবীটার মতো তেরো লক্ষ পিণ্ডের তাল পাকালে তবে ঐ সূর্যটার সমান বড়ো হয়। তাঁরা কেমন করে জানলেন? যাঁরা জরিপ করেন তাঁরা জানেন, খুব দূরের জিনিসকে নানারকমে পরখ করে এমন হিসাব পাওয়া যায় যা থেকে চট করে বলা যায় যে জিনিসটা কতখানি দূরে। এই কৌশলটি পণ্ডিতেরা সূর্যের উপর খাটিয়েছেন। পৃথিবীর দুই জায়গায় দুইজন লোক বসে সূর্যটাকে খুব সুক্ষভাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন, কোন সময়ে সেটাকে আকাশের ঠিক কোন জায়গায় দেখা যায় এবং দুজনের হিসাব মিলিয়ে অঙ্ক কষে বলেছেন যে সুর্যটা এখান থেকে নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল দূরে। সে যে কতদূর তা আমাদের কল্পনাতেই আসে না। একটা এঞ্জিন যদি ঘণ্টায় ষাট মাইল করে ক্রমাগত ছুটে আজ সূর্যের দিকে রওয়ানা হয়, সে একশো সাতাত্তর বছর পরে (২০৯৩ খ্রীষ্টাব্দে) সূর্যে গিয়ে পৌঁছাবে। পণ্ডিতেরা এই-সকল মাপ নিয়ে বলছেন যে ঐ সুর্যের পাশে পৃথিবীটাকে বসালে সেটা দেখাবে যেন একটি তরমুজের পাশে একটি মুসুরির ডাল।

 সুর্যটা কিসের তৈরি? সূর্যের আলোক পরীক্ষা করে পণ্ডিতেরা বলেন যে, পৃথিবীটা যা দিয়ে তৈরি সূর্যটাও ঠিক তাই দিয়েই তৈরি। তবে, সেই-সব মালমসলা জমে এখানে যেমন জল মাটি পাথর হয়েছে সেখানে তা হবার জো নেই—কারণ, সেখানকার সর্বনেশে গরমে সব জিনিস সত্য সত্যই আগুন হয়ে উঠে। লোহা শুধু গলে যায় তা নয়, ফুটন্ত জলের মতো টগবগ করে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। এই ফুটন্ত আগুন আর জ্বলন্ত বাষ্প সূর্যের চারিদিক ঘিরে লক্‌লক্ করতে থাকে। শুধু চোখে মনে হয় সূর্যটা বেশ একটি মোলায়েম গোল জিনিস, তার গায়ে কোথাও আঁচড়ের দাগটি পর্যন্ত নেই। কিন্তু আসলে তা নয়। ভালো দুরবীন দিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে, তার সমস্ত গা ভরে আগুনের চিক্‌মিকি খেলছে—আগুনের সমুদ্রে আগুনের ঢেউ, তার মধ্যে বড়ো-বড়ো আগুনের ডেলা পাগলের মতো ডুবছে আর ভাসছে। তা ছাড়া সূর্যের গায়ে প্রায়ই ছোটো বড়ো ফোস্কা দেখা যায়-ফোস্কাগুলি তত উজ্জ্বল নয়, তাই দেখতে হঠাৎ কালো দেখায়। জলের মধ্যে

১৭০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২