নয়—বিশ্বজগতে কারো স্থির হয়ে বসে থাকবার হুকুম নাই। আমাদের এই পৃথিবী এবং আর-সমস্ত গ্রহকে নিয়ে সূর্য ভয়ানক বেগে শূন্যে ছুটে চলেছে। সে কোনদিকে কিরকম বেগে চলছে, তাও পণ্ডিতেরা হিসাব করে ঠিক করেছেন। এই হিসাবে সুর্য ঘণ্টায় প্রায় কুড়ি হাজার মাইল পথ ছুটে চলেছে।
শুনলে হঠাৎ হয়তো মনে হতে পারে, এমন সাংঘাতিকভাবে চলতে গিয়ে হয়তো কোনদিন কোনো তারার সঙ্গে তার টু লেগে যাবে—কিন্তু সেরকম ভয়ের কোনো কারণ নেই। এই-সব তারাগুলি এক-একটি এত দূরে যে সূর্যটা দশ বৎসর এইভাবে ছুটলেও কোনো তারার কাছে পৌঁছবার সম্ভাবনা নেই। তোমরা হিসাব করে দেখ-এক ঘটায় যদি কুড়ি হাজার মাইল যাওয়া যায় তা হলে দশলক্ষ বৎসরে কত মাইল? ২০০০০x২৪x৩৬৫x১০০০০০০। তা হলে এক-একটি তারা কতখানি দূরে একবার ভাবতে চেষ্টা কর।
সন্দেশের ধাঁধার উত্তরের চিঠিগুলি সেদিন দেখছিলাম। কেউ আধ মাইল দূর থেকে লিখেছে চিঠি, কেউ লিখেছে পনেরোশো মাইল দূর থেকে কিন্তু এক পয়সার পোস্টকার্ডে প্রায় সকলেই লিখেছে। এক পয়সা খরচে পনেরোশো মাইল চিঠি পাঠানো, একি কম সস্তা হল? হঠাৎ মনে হতে পারে অত কম মাশুলে এতদূর চিঠি পাঠাতে ডাকঘরের বুঝি লোকসান হয়। কিন্তু তারা কি দুই-এক খানা চিঠি পাঠায়? প্রতিদিন লাখে লাখে চিঠি আর পার্সেল তারা পাঠায়। তাতেই তাদের খরচে পুষিয়ে যায়। ডাকঘরের বন্দোবস্তই-বা কি কম আশ্চর্যরকম! তুমি হয়তো কলকাতায় বসে একটা পোস্টকার্ডে চিঠি| লিখে ডাকবাক্সে সেটাকে ফেলে দিলে। কিছুক্ষণ পরে ডাকঘরের লোক এসে ডাকবাক্সের চারি খুলে চিঠিগুলো ডাকঘরে নিয়ে গেল। সেখানে অনেকগুলি লোকে মিলে চিঠির উপরে ডাকঘরের ছাপ মারে, আর এক-একটা থলিতে এক-একটা রেলে পাঠাবার চিটিগুলি ভরে ফেলে—যেমন দার্জিলিং মেলে দার্জিলিং, খরসান, জলপাইগুড়ি, রাজসাহী, কুচবিহার, এসব জায়গার চিঠি; পঞ্জাব মেলে বর্ধমান, মধুপুর, পাটনা, বাঁকিপুর, এলাহাবাদ, দিল্লী, লাহোর এই-সব জায়গার চিঠি। তার পর সব ছোটো ডাকঘর থেকে বড়ো ডাকঘরে থলেগুলি পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে স্টেশনে চলে যায়! রেলের গাড়ির মধ্যে আবার ডাকঘরের বন্দোবস্ত আছে। সেখানে থলিগুলো খুলে প্রত্যেক জায়গাকার চিঠি আলাদা করে এক-একটা খোপে ভরে রাখে। তার পর সব চিঠি বাছা হয়ে গেলে এক-এক জায়গার চিঠি এক-একটা আলগা থলিতে ভরে ফেলে। সেখানে যখন রেল পৌঁছায় তখন রেলের ডাকঘর থেকে সেই সেই জায়গার চিঠিগুলো নামিয়ে দেয়। তার পর আবার ডাকঘরে সেই থলি নিয়ে গিয়ে তার থেকে চিঠি বের করে, বেছে, পিয়ন দিয়ে বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে