পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেওয়া হয়। এত হাঙ্গামার পরেও চিঠি যে ঠিকমতো গিয়ে পৌছায় এই আশ্চর্য-কৃচিৎ ডাকঘরের কোনো লোকের দোষে হারাতে পারে। পৃথিবীর যেকোনো জায়গার একজন লোকের ঠিকানা খুঁজে বের করে তার ঠিকানায় একখানা চিঠি লিখে দাও। তার পর ব্যস, আর ভাবতে হবে না—সেটা ঠিক সেই লোকের কাছে হাজির হবে।

 সব সময়ই যে রেলে ডাক যায় তা নয়। রেলে যায়, জাহাজে যায়, ছোটো স্টিমারে যায়, নৌকায় যায়, গাড়িতে যায়, মানুষের পিঠে যায়, কুকুরে-টানা গাড়িতে যায়এমন-কি, এরোপ্লেনে করে আকাশ দিয়েও যায়। এমন জায়গাও তো আছে যেখানে ডাকঘর নাই। সেখানের ঠিকানাতে চিঠি লিখলেও চিঠি ঠিকই পৌঁছায়। তবে সেখানে চিঠি যেতে কিছু দেরি লাগে। ইউরোপে যে-সব সৈন্য যুদ্ধ করছে তাদের কাছেও চিঠি যাবার উপায় আছে। সে যেখানেই থাকুক-না কেন তার নাম আর তার সৈন্যদলের নাম, এইটুকু জানলেই লড়াইয়ের ডাকঘরওয়ালারা ঠিক তার কাছে চিঠি কিংবা পার্সেল পৌঁছে দেবে। আমাদের দেশে অনেক জায়গায় ‘রানার’-এর ডাকের বন্দোবস্ত আছে। একজন লোক কাঁধে করে চিঠির থলি নিয়ে এক ডাকঘর থেকে অন্য ডাকঘরে পৌছে দেয়। হাজারিবাগে আগে ঐরকম বন্দোবস্ত ছিল। তখন অনেক রানার বাঘের মুখে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। অনেক সময় দুষ্ট লোকে নির্জন রাস্তায় পেয়ে ‘রানার'কে মেরে চিঠিপত্র খুলে টাকাকড়ি নিয়ে চলে যায়।

 প্রায় সত্তর বৎসর আগে কোনো দেশে টিকিট অথবা পোস্টকার্ড ব্যবহারের নিয়ম ছিল না। তখন চিঠিপত্র পাঠাতে অত্যন্ত বেশি খরচ হত। ইংলণ্ডের সার রোল্যাণ্ড হিল প্রথমে টিকিট ব্যবহারের প্রস্তাব করেন। সে সময়ে চিঠির মাশুল এত বেশি ছিল যে গরিব লোকের পক্ষে চিঠি পাওয়া বড়ো মুশকিলের কথা ছিল। যার কাছে চিঠি যাবে তাকেই মাশুল দিতে হত। আর অনেক সময় মাশুল দিতে না পারায় অনেক গরিব লোককে দরকারি চিঠিও ফিরত দিতে হত। লণ্ডন থেকে মাত্র চার মাইল দূরে একটা জায়গায় একটা চিঠি পাঠাতে এক টাকারও বেশি খরচ হত। পার্লামেণ্ট সভার সভ্যেরা বিনা পয়সায় চিঠি পাঠাতে পারতেন-চিঠির উপর তার একটা নাম সই থাকলেই হয়। তারা অনেক সময় তাদের বন্ধুদের চিঠির উপরও সই করে দিতেন আর বন্ধুরা সব বিনা পয়সায় চিঠি পাঠাতেন। কেবল চিঠি নয়, অনেক বড়ো-বড়ো জিনিসও তাঁরা ঐরকম সই করে বিনা পয়সায় পাঠাতেন। গরিব লোকেরই বড়ো মুশকিল হত। তারা নিরুপায় হয়ে শেষে নানারকম ফাঁকি দিতে আরম্ভ করল। একজন তার বোনকে বলল যে সে যখন তাকে চিঠি লিখবে তার উপরের ঠিকানার পাশে কতকগুলি চিহ্ন থাকবে, সেই চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে সে ভালো আছে কি অসুস্থ হয়েছে। বোনও সেইরকম চিহ্ন দিয়ে তার ভাইকে চিঠি লিখত। চিঠির ভিতরে কিন্তু কেবল সাদা কাগজ। চিঠি যখন পৌঁছাত তখন তার উপরের চিহ্নগুলি দেখে নিয়ে তারা চিঠিটা ফেরত দিত আর বলত, “অত মাশুল দিয়ে চিঠি নেবার ক্ষমতা আমার নেই।” এইরকম আরো কত উপায়ে লোকেরা ডাকঘরকে ঠকাত।

 রোল্যাণ্ড হিল যখন টিকিট ব্যবহারের প্রস্তাব করেন তখন বিলাতে পার্লামেণ্ট সভায়

নানা নিবন্ধ
১৭৩