পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছবি আছে যাহা দেখিলে মনে হয় না যে এগুলি সেই লুপ্ত যুগের জিনিস। সেই সময়ে যে-সকল রঙ ব্যবহার হইত সেই রঙগুলি পর্যন্ত এক-এক জায়গার বেশ পরিষ্কার দেখা যায়। এক-একটি ঘরের ছাদ, দেওয়াল প্রভৃতি এমন অবস্থায় আছে যে, সমঝদার লোকে তাহা দেখিয়া বলিতে পারে নুতন অবস্থায় ঘরটি ঠিক কিরকম ছিল। এই-সকল ছবি ও মূর্তি দেখিলে বোঝা যায় যে, সে দেশের লোকদের বেশ সৌন্দর্যজ্ঞান ছিল। ছবির মধ্যে লড়াই ও শিকারের ছবিই খুব বেশি—মাঝে মাঝে রাজারাজড়ার ছবিও আছে। ছবি দেখিয়া সে দেশের লোকদের অস্ত্রশস্ত্র, পোশাক ও চেহারা সম্বন্ধে অনেক খবর জানা যায়। অসুরের দল আর তাহাদের শত্রুর দলের মধ্যে এ বিষয়ে কিরূপ তফাত ছিল, তাহাও অনেক ছবিতে পরিষ্কার দেখানো হইয়াছে। অসুরেরা বড়োই যুদ্ধপ্রিয় ছিল এবং প্রায়ই অন্যান্য জাতিদের সঙ্গে লড়াই লইয়া ব্যস্ত থাকিত।

 অসুরদের কথা বলিতে হইলে তাহাদের ভাষার কথাও বলিতে হয়। সে ভাষায় এখন আর কেহ কথা বলে না, সে দেশের লোকেরা পর্যন্ত তাহার সম্বন্ধে কোনোরূপ সংবাদ জানে না—ভাষার একমাত্র চিহ সেকালের অক্ষর। মাটির উপর বাটালি দিয়া তীরের ফলকের মতো অদ্ভুত সব আঁচড় কাটিয়া অক্ষর লেখা হইত! সেই মাটি পোড়ইয়া ইটের ‘পুঁথি’ তৈয়ারি হইত। একশত বৎসর আগে সে অক্ষর পড়িতে পারে এমন লোক পৃথিবীতে ছিল না। অথচ আজকাল পণ্ডিতেরা এই-সব আঁচড় পড়িয়া তাহা হইতে কত সংবাদ কত ইতিহাস উদ্ধার করিতেছেন। বিদ্যা বুদ্ধি ও বাণিজ্যে বাবিলনের লোকেরা অসুরদের চাইতে অনেক বেশি অগ্রসর ছিল, সুতরাং তাহাদের ভাষা ধর্ম শিল্প সাহিত্য আইনকানুন প্রভৃতি প্রায় সকল বিষয়েই অসুরেরা বাবিলনের অল্পাধিক অনুকরণ করিত। একটা উঁছু পাহাড়ের গায়ে বাবিলনের অক্ষরের পাশে পারস্যের অক্ষরে লেখা একটা যুদ্ধের বর্ণনা দেখিয়া একজন ইংরাজ পণ্ডিত এই দুয়ের তুলনা করিয়া বাবিলনের অক্ষরের সংকেত বাহির করেন। এইভাবে গ্রীক অক্ষরের সাহায্যে ইজিপ্টের অদ্ভুত ছবিওয়ালা অক্ষরের রহস্য বাহির করা হয়। এই-সকল পুরাতন অক্ষরে লেখা ইটের পুঁথি, কীর্তিস্তম্ভ বা খোদাই-করা পাহাড় প্রভৃতি হইতে অসুরদের ইতিহাসের অনেক কথা জানা গিয়াছে। অনেক রাজার নাম ও তারিখ, অনেক যুদ্ধবিগ্রহের বর্ণনা, ছোটো বড়ো নানা জাতির সহিত সন্ধি ও বিবাদের সংবাদ এ-সমস্তই যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। অসুরদের প্রধান অস্ত্র ছিল তীর-ধনুক। তাহারা ঘোড়ায় ও রথে চড়িয়া যুদ্ধ করিত, সঙ্গে পদাতিক সৈন্যও থাকিত। যেমন যোদ্ধা তেমনি শিকারী। আমাদের দেশের মতো অসুরের দেশেও সেকালের রাজারা মৃগয়া করিতেন। হিংস্র জন্তু নষ্ট করিয়া প্রজাকে রক্ষা করা রাজারই কর্তব্য বলিয়া গণ্য হইত।

অসুরে রাজাদের বীরত্বের কথা বলিতে গেলে একজনের কথা বিশেষভাবে বলা উচিত, তাহার নাম টিগলাৎ-পিলেসের। তিন হাজার বৎসর আগে ইনি অসুর দেশের রাজা হইয়া নানা দেশ জয় করেন। তাঁহার শাসনে অসুরের রাজ্য ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। ইনি যখন উত্তরে দিগ্বিজয় করিতে বাহির হন তখন বাবিলনের সৈন্যেরা তাঁহার রাজ্য আক্রমণ করে এবং রাজমন্দিরের দেবমূর্তি চুরি করিয়া লইয়া

১৭৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২