পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যায়। টিগলাৎ-পিলেসের ইহার প্রতিশোধের জন্য বাবিলন আক্রমণ করেন ও তাহার রাজধানী পর্যন্ত লুটিয়া অনেকখানি দেশ অধিকার করিয়া ফেলেন। একদিকে যেমন যোদ্ধা, অন্যদিকে টিগলাৎ-পিলেসের একজন অসাধারণ শক্তিশালী শিকারী ছিলেন। হাতি সিংহ প্রভৃতি ভয়ানক জন্তু তিনি নিজের হাতে তীর-ধনুক ও তলোয়ার লইয়া শিকার করিতেন। তিনি রথে চড়িয়া প্রকাণ্ড দশটা হাতি ও প্রায় আটশত সিংহ শিকার করেন -ইহা ছাড়া পায়ে হাঁটিয়া যে-সকল সিংহ মারেন তাহার সংখ্যাও একশতের উপর হইবে।

 টিগলাৎ-পিলেসের মারা গেলে পর অসুরদের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হইয়া পড়ে। তাহাদের প্রকাণ্ড রাজ্য ক্রমেই ছোটো হইতে থাকে। প্রায় দুইশত বৎসর পরে আরো কয়েকটি শক্তিশালী রাজার আবির্ভাব হয় এবং ইহারা আবার দেশকে জাগাইয়া তোলেন। এই-সকল রাজাদের মধ্যে অসুর-নসির-পালের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ইহার রাজত্বকালের নানারূপ চিহ্ন ও পরিচয় খুব প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গিয়াছে এবং তাহাতে দেখা যায় যে, ইনি একদিকে যেমন শৌখিন, অপর দিকে যুদ্ধের সময় তেমনি হিংস্র ও নিষ্ঠুর ছিলেন। দেশ-বিদেশের লোক তাহার নামে ভয়ে কাঁপিত!

 ইহার রাজত্বের পর হইতে ক্রমে আবার অসুরদের অবনতি আরম্ভ হয়। তার পর অসুররাজকুলের শেষ যোদ্ধা মহাবীর অসুরবানি-পালের সময়ে আর একবার এ দেশ মাখা তুলিয়া উঠে। উৎসাহের চোটে অসুরেরা একেবারে আফ্রিকায় গিয়া ইজিপ্ট জয় করিয়া ফেলিল- দক্ষিণে আরবের মরুভূমিতে সসৈন্যে হাজির হইল। কিন্তু ইহাই তাহাদের শেষ কীর্তি। ক্রমাগত যুদ্ধ-বিদ্রোহের ফলে সমস্ত জাতি যখন অবসন্ন হইয়া পড়িল তখন প্রবল শত্রুরাও সুযোগ বুঝিয়া চারিদিক হইতে তাহাদের রাজ্য লুটিয়া লইল। অবশেষে পারস্যের দুর্দান্ত সেনাদল আসিয়া তাহাদের রাজধানী ঘিরিয়া ফেলিল। নিনেভে শহরের চারিদিকে প্রকাণ্ড দেওয়াল ঘেরা। এই দেওয়ালের জোরে অসুরেরা তিন বৎসর ধরিয়া তাহাদের প্রাচীন শহরের জন্য লড়াই করিল—কিন্তু অবশেষে হার মানিতেই হইল। তার পর এতদিনের সাধের শহর শত্রুর হাতে পড়িয়া একেবারে ছারখার হইয়া গেল।

 কোথায়-বা অসুর রাজ্য-আর কোথায়-বা সেই অসুর জাতি। দুহাজার বছর সারা দেশ কাঁপাইয়া যাহারা রাজত্ব করিল এখন কেই-বা তাহাদের খবর রাখে। অত বড়ো নিনেভে শহর, সেও মাটির নীচে কবর চাপা পড়িল। এখন আবার লোকে সেই কবর খুঁড়িয়া তাহার কংকাল বাহির করিয়াছে। সেখানে গিয়া দেখ শ্মশানের মতো দেশ, লোক নাই জন নাই, আছে কেবল মৃত শহরের জীর্ণ কংকাল, আর রাত্রের অন্ধকারে সিংহের হুংকার।

সন্দেশ-মাঘ, ১৩২৩


নীহারিকা

 তোমরা আকাশে ‘কালপুরুষ' দেখিয়াছ? আজকাল অর্থাৎ এই ফাল্গুন মাসে প্রথম রাত্রে যদি দক্ষিণমুখী হইয়া দাঁড়াও তবে প্রায় মাথার উপর এই 'কালপুরুষ'কে

নানা নিবন্ধ
১৭৭