তখন আর দিক্বিদিক জ্ঞান নাই। তিনি আহার-নিদ্রা ছাড়িয়া কেবল চুল্লিতে কাঠ জোগাইতেছেন। ক্রমে কাঠ সব ফুরাইয়া আসিল—তিনি বাগানের কাঠের বেড়া ভাঙিয়া আগুনে দিলেন। তাহাও যখন ফুরাইয়া আসিল তখন বাড়ির টেবিল চেয়ার যাহা সম্মুখে পাইলেন সব ভাঙিয়া ভাঙিয়া জ্বালানি কাঠ করিতে লাগিলেন। এদিকে তাঁহার স্ত্রী পুত্র পরিবার সকলে কাঁদিতে কাঁদিতে শহরের মধ্যে ছুটিয়া বাহির হইয়াছে, আর সকলকে ডাকিয়া বলিতেছে যে প্যালিসি পাগল হইয়া বাড়িঘর ভাঙিয়া ফেলিতেছেন। শুনিয়া সকলে ব্যস্ত হইয়া দেখিতে আসিল, ব্যাপারখানা কি। ততক্ষণে প্যালিসির মসলা গলিয়া চমৎকার সাদা পালিশ হইয়া ফুটিয়াছে—তিনি অতি যত্নে সেগুলিকে ঠাণ্ডা করিয়া বাহির করিতেছেন।
প্যালিসি স্থির করিলেন তিনি তাহার আবিষ্কারকে ব্যবসায়ে লাগাইবেন। এক কুমারের সহিত বন্দোবস্ত করিয়া তিনি ছয় মাসে তাহাকে দিয়া কতগুলি সুন্দর সুন্দর বাসন গড়াইলেন। কিন্তু সেগুলিতে পালিশ ধরাইবার সময় তাঁহার চুল্লি ফার্টিয়া ধুলা ও ঝুল পড়িয়া তাঁহার চমৎকার পালিশ করা বাসনগুলিতে দাগ ধরাইয়া দিল। প্যালিসি কিছু বলিলেন না, বাসনগুলি ভাঙিয়া আবার চুল্লি মেরামত করিতে লাগিলেন। তাঁহার সে ধৈর্য আর বীরত্বের আর তুলনা হয় না। খোলা বাগানে সারাদিন রোদে ঘামিয়া বৃষ্টিতে ভিজিয়া তিনি চুল্পির তদ্বির করিতেন। বাড়ির বাহির হইলে লোকে তাঁহাকে দেখিয়া হাসাহাসি করিত। সারাদিন পরিশ্রমের পর যখন তাহার শরীর মন অবসন্ন হইয়া আসিত, তিনি বাড়িতে ঢুকিবামাত্র চারিদিক হইতে সকলে ঠাট্টা বিদ্রুপ নিন্দা ও অভিযোগ করিত। এতরকম অশান্তির মধ্যে ষোলো বৎসর অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়া প্যালিসি আপনার ব্যবসায়কে সফল করিয়া রাজসম্মান লাভ করেন। কিন্তু এখানেও তাঁহার দুঃখের শেষ হয় নাই। ব্যবসায়ে কৃতকার্য হইবার পরেও শেষ বয়স পর্যন্ত তাঁহাকে নানা শত্রুর হাতে অনেক অত্যাচার সহিতে হইয়াছিল। সে-সকল অত্যাচার তিনি যেরূপ তেজের সহিত সহ্য করিয়াছিলেন তাহা প্যালিসির মতো বীরেরই উপযুক্ত। সকল বিষয়ে তিনি যাহা সত্য বুঝিতেন নির্ভীকভাবে তাহা প্রচার করিতেন। এইজন্য তাঁহার নিজের স্বাধীন ধর্মমত বজায় রাখিতে গিয়া তিনি নানারকমে লাঞ্ছিত হন এবং অবশেষে আশি বৎসর বয়সে মৃত্যুভয়কে অগ্রাহ্য করিয়া এক অন্ধকার কয়েদখানায় বন্দী অবস্থায় মারা যান।
জলের চাইতে হালকা জিনিস যেমন জলে ভাসে বাতাসের চেয়ে হালকা জিনিস তেমনি বাতাসে ভাসে। আগুনের উপরকার তপ্ত বাতাস সাধারণ ঠাণ্ডা বাতাসের চাইতে অনেক পাতলা; তাই সে উপরে উঠে—আর সেই উপরমুখী স্রোতের টানে যত রাজ্যের কয়লা