পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিনের বেলা বেরুতে গেলে তাদের আর রক্ষা নাই—কারণ, অত বড়ো জিনিসকে গোলা মেরে ফুটো করতে কতক্ষণ? রাতদুপুরে যখন তারা ঘুমন্ত শহরের উপর বোমা ফেলতে থাকে—তখন চারদিক হতে বড়ো বড়ো 'Search light'-এর আলোর ধারা আকাশ হাতড়ে তাকে খুঁজে বেড়ায় একবারটি তার উপর আলো ফেলতে পারলেই যত রাজ্যের তার উপর তাক্ করতে থাকে। তার পর চারিদিক হতে এরোপ্লেনগুলা ভিমরুলের মতো ঘিরে আসে। তখন জাহাজটিকে প্রাণ নিয়ে পালাতে হয়। এরকম অবস্থায় এরোপ্লেনের সর্বদাই চেষ্টা থাকে জাহাজের উপরে উঠবার জন্য। কারণ, উপর থেকে বোমা ফেলে তার পিঠ ভেঙে দেওয়াই হচ্ছে জাহাজ মারবার সবচাইতে ভালো উপায়। ফানুষ জাহাজ যত উঁচুতে যেমন তাড়াতাড়ি উঠতে পারে ঘুড়ির নৌকা তেমন পারে না। কাজেই জাহাজ কাছে আসবার আগে থেকেই এরোপ্লেন অনেকখানি উঠে থাকে-যাতে ঠিক সময়ে সে জাহাজের ঘাড়ের উপর নামতে পারে।

সন্দেশ-চৈত্র, ১৩২৩


ক্লোরোফর্ম

 আমরা মহাভারতে পড়িয়াছি, বিরাট রাজার গৃহে অজ্ঞাতবাসের শেষদিকে অর্জুন কৌরবদলের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছিলেন। যুদ্ধের মধ্যে তিমি সম্মোহন অস্ত্র মারিয়া শত্রুদলকে অজ্ঞান করিয়া ফেলেন। সম্মোহন অস্ত্রটা কিরূপ তাহা জানি না-কিন্তু আজকালকার ডাক্তারেরা এই বিদ্যাটি রোগীদের উপর অনেক সময়েই প্রয়োগ করিয়া থাকেন। ইহার ফলে, রোগীকে অজ্ঞান করাইয়া তাহার হাত পা কাটিয়া ফেলা হয়, অথচ রোগী তাহার কিছুই জানিতে পারে না। ব্যাপারটি অতি সহজ। রোগীর নাকের কাছে খানিকটা ঔষধ ধরিয়া তাহাকে শুঁকিতে দেওয়া হইল—রোগী সেই মিষ্ট গন্ধ শুঁকিতে শুঁকিতে বেহুঁশ হইয়া গেল। বাস্, তার পর চট্‌পট্ ছুরি চালাইয়া কাজ সারিয়া লইলেই হয়।

 আফিং খাইলে বা অন্য নানারকম নেশা করিলে মানুষের জ্ঞান থাকে না। একবার একটা মাতাল নেশার ঘোরে খানায় পড়িয়া পা ভাঙিয়া ফেলে। ডাক্তার সেই নেশার অবস্থাতেই তাহার পায়ের উপর অস্ত্র-চিকিৎসা করেন—মাতাল তাহার কিছুমাত্র বুঝিতে পারে নাই। কোনো অসুখের যন্ত্রণা যখন রোগের পক্ষে অসহ্য হইয়া পড়ে ডাক্তারেরা তখন আফিং জাতীয় ঔষধ খাওয়াইয়া তাহাকে ঘুম পাড়াইয়া রাখেন—সে ঘুমে শরীরের সমস্ত বেদনাবোধকে এমন অবশ করিয়া ফেলে যে, রোগী আর কোনোরূপ যন্ত্রণা টের পায় না।

 কিন্তু এরূপভাবে নেশা ধরাইয়া চিকিৎসা করার বিপদ অনেক। একে তো এইসকল ঔষধে শরীরের মধ্যে নানারূপ অনর্থ ঘটাইয়া থাকে, চিকিৎসা শেষ হইবার বহু পরেও ঔষধের দরুণ নানারূপ উৎপাত চলিতে থাকে। তাহার উপর আবার ঔষধের অভ্যাস একবার ধরিয়া গেলে-তাহাতে রোগীকে একেবারে নেশার মতো পাইয়া বসে।

নানা নিবন্ধ
১৮৫