পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জ্বালিয়ে নিয়ে” জ্বলে মরে তখন তার সেই শেষ আলোতে আমরা তাদের একটুক্ষণ দেখি মাত্র। যা হোক, ভয়ের কারণ নাই-বা থাকুক একেবারে হাজার হাজার উল্কা পৃথিবীর উপর ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে মরছে এ কথা ভাবতেও খুব অশ্চর্য লাগে। ব্যাপারটা চোখে দেখতে আরো আশ্চর্য, তাতে আর সন্দেহ কি?

 আর একটি ভয়ানক জমকাল ব্যাপারের কথা না বললে একটা মস্ত কথা বলি থেকে যায়—সেটি হচ্ছে সূর্যের পুর্ণগ্রহণ। এ জিনিসটি যিনি একবার চোখে দেখেছেন তিনি আর কখনো ভুলতে পারেন না। যখন গ্রহণটা পূর্ণ হয়ে আসতে থাকে, চারিদিক অন্ধকারে ঘিরে ফেলে, চাঁদের প্রকাণ্ড কালো ছায়া দেখতে দেখতে চোখের সামনে পাহাড় নদী সব গ্রাস করে ছুটে আসতে থাকে-যখন বনের পশু আর আকাশের পাখি পর্যন্ত ভয়ে কেউ স্তধ হয়ে থাকে, কেউ চীৎকার করে আর্তনাদ করে তখন মানুষের মনটাও যে ভয়ে বিস্ময়ে কেঁপে উঠবে তাতে আর আশ্চর্য কি? বিশেষত যারা অশিক্ষিত বা অসভ্য যাদের কাছে সুর্যের এই হঠাৎ নিভে যাওয়ার কোনোই অর্থ নেই, তারা যে তখন পাগলের মতো অস্থির হয়ে বেড়াবে, এ তো খুবই স্বাভাবিক। তারাও প্রলয় বলতে ঠিক এইরকমই একটা কিছু কল্পনা করে—এমনই একটা অদ্ভুত বিরাট গম্ভীর ব্যাপার-যার ভয়ংকর মুর্তিতে মানুষের মনকে একেবারে দমিয়ে অবশ করে দেয়।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২৪


ধুলার কথা

 ঘরের দেয়াল মেঝে আসবাবপত্র যতই ঝাড়ি যতই মুছি, খানিকক্ষণ রাখিয়া দিলেই আবার দেখি, যেই ধুলা সেই ধুলা। এত ধুলা আসেই-বা কোথা হইতে, আর এ ধুলার অর্থই-বা কি?

 টেবিলের উপর হইতে খানিকটা ধুলা সংগ্রহ করিয়া অণুবীক্ষণ দিয়া দেখ-তাহার মধ্যে চুন, সুরকি, কয়লার গুঁড়া হইতে সূতার আঁশ, পোকার ডিম, ফুলের রেণু পর্যন্ত প্রায় সবই পাওয়া যাইতে পারে। আরো সূক্ষভাবে দেখিতে পারিলে কত সাংঘাতিক রোগের বীজও তাহার মধ্যে দেখা যাইবে। জানলার ফাঁক দিয়া যে আলোর রেখা ঘরের মধ্যে আসে তাহার মধ্যেও চাহিয়া দেখ, ধুলা যেন কিল্‌বিল্ করিতেছে। এই ধুলার মধ্যেই আমরা বাস করি চলি ফিরি, নিশ্বাস লই। মানুষ যত দুর দেখিয়াছে, যত দূর খুঁজিয়াছে, ধুলার আর শেষ কোথাও নাই। আকাশে খুঁজিয়া দেখ। যত দূর উঠিবে, তত দূর ধুলা-যেখানে মেঘ নাই কুয়াশা নাই, বাতাস যেখানে অসম্ভবরকম পাতলা সেখানেও ধুলার অভাব নাই। সে ধুলা যে কত সূক্ষম তাহা চোখে মালুম হয় না, অণুবীক্ষণের হিসাব দিয়া বুঝিতে হয়। অথচ সে ধুলাও বড়ো সামান্য নয়—সেই ধুলাই সারাটি আকাশকে নীল রঙে রাঙাইয়া রাখে, সেই ধুলাই উদয়াস্তের সময় সূর্য কিরণকে শুষিয়া এমন আশ্চর্য জমকাল রঙের সৃষ্টি করে। আরো দূরে যাও, পৃথিবী ছাড়িয়া

নানা নিবন্ধ
১৯৩