বোতামের ফিকে ছায়া দেখা যাইবে কিন্তু কাগজ সুতা বা চামড়ার ব্যাগ খুঁজিয়া পাওয়া মুস্কিল হইবে-অথচ ব্যাগের ভিতর যদি টাকা পয়সা থাকে তাহারও পরিষ্কার ছায়া পড়িবে।
কিন্তু পণ্ডিতেরা কেবল তামাশা দেখিয়াই সন্তুষ্ট থাকেন না, তাহারা ইহার নিয়মকানুন বাহির করিয়া ব্যাপারটাকে অনেকরকম কাজে লাগাইয়াছেন। ডাক্তারেরা এই আলোকের সাহায্যে রোগীর দেহ পরীক্ষা করিতেছেন, নানারকম কৌশল করিয়া জ্যান্ত মানুষের বুকের ধুক্ধুকানি আর পাকস্থলীর হজমক্রিয়া দেখিতেছেন, শরীরের ভিতরে কোথায় হাড় ভাঙিল, কোথায় গুলি লাগিল, কোথায় উৎকট রোগের সঞ্চার হইল, সব চোখে দেখিয়া তাহার ব্যবস্থা করিতেছেন। আজকালকার যুদ্ধে কত হাজার হাজার আহত সৈন্যকে এই আলোকে পরীক্ষা করিয়া আঘাতের রকমটা স্পষ্ট বুঝিয়া তাহার চিকিৎসা করা হইতেছে। ব্যবসা বাণিজ্যে নানা জিনিসের ভেজাল ধরিবার জন্য ও নানারকম খুঁত পরীক্ষার জন্যও এই আলোর ব্যবহার হয়। প্রথম যাহারা এই-সকল পরীক্ষা করিয়াছিলেন তাঁহারা বুঝিতে পারেন নাই, এ আলো কি সাংঘাতিক জিনিস। অদৃশ্য আলোয় ক্রমাগত কাজ করিতে করিতে অনেকের চোখ অন্ধ হইয়াছে, হাতে সাংঘাতিক ঘা হইয়া হাতটি নষ্ট হইয়াছে, এমন-কি, কেহ কেহ প্রাণ পর্যন্ত দিয়াছেন। এমন সর্বনেশে আলো।
তোমাদের কাহারও মনে কি এমন অহংকার আছে যে তোমার চেহারাটি খুব সুন্দর? যদি থাকে, তবে একটিবার এই আলোতে ঐ মুখখানির ফোটো তুলাইয়া দেখ। তাহা হইলে বোধ হয় আর রূপের দেমাক থাকিবে না।
ইংরাজিতে Seven Wonders of the world বা পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্য কীর্তির কথা শুনিতে পাই। ইজিপ্টের পিরামিড তার মধ্যে একটি। একটি বলিলাম বটে কিন্তু আসলে পিরামিড একটি নয়, অনেকগুলি। ইজিপ্টের নানা জায়গায় ঘুরিলো হয়তো একশো গণ্ডা পিরামিড খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে। কিন্তু তাহার মধ্যে অধিকাংশই ভাঙা ইট পাথরের স্তুপমাত্র। বাস্তবিক দেখিবার মতো নামজাদা পিরামিড খুব অল্পই আছে, তাহাদের মধ্যে কাইরো নগরের কাছে যে তিনটি পিরামিড সেইগুলিই সকলের চাইতে আশ্চর্য।
আশ্চর্য বলি কিসে? প্রথম আশ্চর্য তার বিপুল আয়তন। সবচাইতে বড় যে পিরামিড, যাহাকে চেয়প্স্ বা খুফুর পিরামিড বলে সেটি প্রায় সাড়ে তিন শো হাত উচু! একটা সাধারণ তিনতলা বাড়ির দশ গুণ। দূর হইতে দেখিলে মনে হয় একটা ইটের পাঁজা—তাহার গায়ে কোনো কারুকার্য নাই, গঠনের কোনো বিশেষত্ব নাই। দেখিয়া বিশেষ কোনো সম্ভ্রমের উদয় হয় না। কিন্তু একটিবার কাছে গিয়া তাহার নীচে দাঁড়াইয়া