পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁহারই নামে সেই দ্বীপের নাম হইয়াছে টাসমানিয়া। দ্বীপটাকে তিনি দ্বীপ বলিয়া বুঝিতে পারেন নাই—তিনি ভাবিলেন, এই সেই প্রকাণ্ড নূতন দেশ। দুঃখের বিষয় দ্বীপটা তাঁহার ভালো করিয়া দেখা হয় নাই। একদল নাবিক লইয়া তীরে নামিতেই তাঁহারা দেখিলেন একটা গাছের গায়ে কতগুলা খাঁজ কাটা রহিয়াছে। অস্ত্রের দাগ দেখিয়া তাঁহারা বুঝিলেন এখানে মানুষ আছে। তিনহাত-সাড়ে তিনহাত অন্তর এক-একটি খাঁজ দেখিয়া নাবিকেরা ভাবিল ঐ খাঁজে খাঁজে পা দিয়া যাহারা গাছে চড়ে তাহাদের পা নিশ্চয়ই সাংঘাতিক লম্বা, সুতরাং তাহারা নিশ্চয়ই রাক্ষস। রাক্ষসের ভয়ে তাহাদের আর নূতন দেশ দেখা হইল না। টাসমানের পর যাহারা নূতন দেশ দেখিতে আসে তাহারা সকলেই হল্যাণ্ড দেশের লোক-তাহারা সে দেশের নাম দিল নুতন হল্যাণ্ড। ইহার প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পরে ড্যাম্পিয়ার নামক এক ইংরাজ অষ্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে জাহাজ লাগাইলেন। সে এক আশ্চর্য সুন্দর জায়গা। তীরে নামিতেই তাজা ফুলের গন্ধে তাঁহাদের মনটা খুশি হইয়া উঠিল। সবুজ গাছগুলি ফুলে ফুলে রঙিন হইয়া উঠিয়াছে, তাহার মধ্যে রঙ-বেরঙের নানান পাখি উড়িয়া উড়িয়া ফিরিতেছে। তাহারা ডাঙায় নামিয়া চারিদিক ঘুরিয়া কত অদ্ভুত দৃশ্য আর তাহার চাইতেও কত অদ্ভুত জন্তু দেখিতে পাইলেন। একটা জন্তু, তার ইঁদুরের মতো মুখ, প্রায় মানুষের মতো বড়ো—সে দুই পায়ে ভর দিয়া বিশ হাত লম্বা লাফ দেয়। তোমরা জান সে জন্তুর নাম কাঙারু কিন্তু সে-সময়ে অমন জন্তু কেহ দেখে নাই। সেদেশের মানুষদের তিনি দেখিলেন—রোগা লম্বা, সরু সরু হাত-পা আর কুচকুচে কালো। তাহারা কাপড় পরিতে জানে না। গাছের ছাল পরিয়া থাকে।

 ড্যাম্পিয়ারের পর আরো প্রায় আশি বৎসর কেহ সে দেশের বড়ো একটা খবর লয় নাই। ১৭৬৯ খৃষ্টাব্দে আবার আর-একজন ইংরাজ নাবিক তাহার সন্ধান করিতে বাহির হইলেন। ইহার নাম কাপ্তান কুক। কাপ্তান কুকের মতো অমন সাহসী নাবিক সেকালে খুব কমই ছিল। তিনি জাহাজে করিয়া কত যে নুতন দেশের সন্ধানে ঘুরিয়াছিলেন তাহার বর্ণনা করিতে গেলেও প্রকাণ্ড পুঁথি হইয়া যায়। কাপ্তান কুক প্রথম যেখানে গেলেন সেটা অস্ট্রেলিয়া নয়, সেটাকে এখন নিউজিল্যাণ্ড বলা হয়। নিউজিল্যাণ্ডের চারিদিক ঘুরিয়া তিনি দেখিলেন এটা একটা দ্বীপ-আসল মহাদেশটা আরো পশ্চিমে। তার পর নিউজিল্যাণ্ড ছাড়িয়া উনিশ দিন পরে তিনি 'নতুন হল্যাণ্ডে' উপস্থিত হইলেন। অনেক ঘুরিয়া একটা সুবিধামতো জায়গায় জাহাজ ঠেকাইতেই চারিদিক হইতে কতগুলা কাদামাখা অদ্ভুত লোক আসিয়া ভীড় করিয়া দাঁড়াইল। তার পর নাবিকেরা যখন জাহাজ হইতে ডাঙায় নামিবার চেষ্টা করিল তখন তাহারা বল্লম ছুঁড়িয়া মারিতে লাগিল। জাহাজ হইতে কতগুলা ফাঁকা আওয়াজ করিতে তাহারা একটু ভয় পাইল, কিন্তু তাহাতে কেহ মরিল না দেখিয়া আবার তাহাদের সাহস ফিরিয়া আসিল। তখন একটা লোকের পায়ে ছর্‌রা মারিতেই তাহারা ভয় পাইয়া পলাইল।

 জাহাজ মেরামতের জন্য কাপ্তান কুককে কিছুদিন সেখানে থাকিতে হইল। এই সময়ের মধ্যে নাবিকেরা সেদেশী লোকেদের সঙ্গে বেশ ভাব করিয়া লইয়াহিল। জাহাজ

২১৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২