পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হারজিত নির্ভর করে। একটা কোনো জিনিসের খুঁটিনাটি বর্ণনা দিয়া তার পর সকলকে বলিতে হয় সমস্ত বর্ণনাটা শুনিয়া আবার মন হইতে লিখিয়া দাও। যেমন একজন মানুষের কথা বললাম তাহার বয়স পঁচিশ হইবে, চোখে কালো চশমা, মাথার সামনের দিকে টাক, খোঁচা খোঁচা ভুরু ও ঝাটার মতো গোঁফ, দাড়ি কামানো, মোটা বেঁটে চেহারা, হাতে একটা সবুজ ক্যাম্বিসের ব্যাগ, গলায় পশমের গলাবন্ধ, গায়ে কালো গরম কোট, তার পকেটে লাল রুমাল, হাতে একটা বাঁশের ছাতা, পায়ে প্রকাণ্ড বুট জুতা, কানে শোনেন কম, চলেন খোঁড়াইয়া-তার উপর গলার আওয়াজখানা ভিজা ঢাকের মতো। এখন এইটুকু ধীরে ধীরে দুবার পড়িয়া তার পর বেশ ভাবিয়া লিখ তো—দেখিবে এইটুকু বর্ণনার মধ্যে হয়তো কিছু কিছু ভুল হইয়া যাইবে।

 এইবার অন্যরকমের আর-একটি খেলার কথা বলি যাহা শুনিতে খুব সহজ শোনায় কিন্তু কাজে ভারি শক্ত। একখানা আয়নার সামনে একটা কাগজ–আয়নার ছায়া দেখিয়া কাগজে কিছু আঁকিবার অথবা লিখিবার চেষ্টা করিয়া দেখ। ভারি একটা অদ্ভুত কাণ্ড হয়। হাতটা যেন কিছুতেই বাগ মানিতে চায় না। অনেক লোককে দেখাইতে হইলে একটা বোর্ডের উপর বেশ বড়ো করিয়া একটা সহজ 'V' আঁকিয়া, সকলকে বল বোর্ডের দিকে না তাকাইয়া কেবল আয়নার ছায়া দেখিয়া তাহার উপর দাগ বুলাইতে। বিশেষত যাহারা খব ভালো ‘ড্রয়িং’ জানেন বলিয়া প্রশংসা পান তাহাদের ধরিয়া এই সামান্য কাজে লাগাইয়া বেশ জব্দ করিতে পার।

 এবারে আর-একটা মজার কথা বলিয়া শেষ করিব। বারো আঙুল লম্বা দুখানি ঝাঁটার কাঠিকে মোড়াইয়া দুটি ইংরাজি V তৈয়রি কর। তার পর আর-একটি লম্বা কাঠির উপর তাহাদের চড়াইয়া, একখানা সমান বুটিং বা অন্য কোনো খসখসে কাগজের উপর ধরিয়া রাখ। A-দুটি যেন ভিতরের দিকে হেলিয়া থাকে। হাতটাকে একেবারে আলগা রাখিও যেন কিছুর উপর ভর করিয়া না থাকে। তাহা হইলে দেখিবে আস্তে আস্তে ঝাটার কাঠি দুইটা কাছাকাছি আসিতেছে। তোমার হাত যতই কাঁপিবে, সে কঁপুনি যতই সামান্য হোকনা কেন, কাঠিটা ততই কাগজের ঘষায় ঘষায় ভিতরদিকে সরিতে থাকিবে!

সন্দেশ -কার্তিক, ১৩২৫


আগুন

 আজকালকার সভ্য মানুষ, যাহারা দিব্য আরামে ঘরে বসিয়া দিয়াশলাই ঠুকিয়া আগুন জ্বালায়, তাহারা ভাবিয়াই দেখে না যে এই আগুন মানুষের কত তপস্যার ধন। যে-আগুন বনে জঙ্গলে দাবানল হইয়া জ্বলে, যে আগুন আগ্নেয় পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় জিভ মেলিয়া ধুঁকিতে থাকে-সেই আগুনকে মানুষ যখন আপনার শক্তিতে জ্বালাইতে শিখিল, সেইদিন মানুষ এমন বিদ্যা শিথিল যাহা মানুষ ছাড়া আর কেহ জানে না। চমকি পাথর ঠুকিয়া বা কাঠে কাঠে ঘষিয়া সেই যে কোন কালের আদিম মানুষ আগুন

২৩০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২