পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাস্। এক মিনিটের মধ্যে ঢং ঢং শব্দে দমকল ছুটিয়া বাহির হইবে। সে শব্দ শুনিলে রাস্তার গাড়ি ঘোড়া মোটর সাইকেল সব শশব্যস্ত হইয়া পথ ছাড়িয়া দেয়। যারা আগুনের পল্টনে কাজ করে, তাহাদের শিক্ষা এবং সাহস দুই দরকার। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহাদের বীরত্বের অনেক আশ্চর্য কাহিনী শুনিতে পাওয়া যায়।

 বড়ো-বড়ো আগুনের দৃশ্য একদিকে যেমন ভয়ানক, আর একদিকে তেমনি সুন্দর। আগুনে শহর বাড়ি পুড়াইয়া কত মানুষের সর্বনাশ করে, তাহাতে মানুষ হাহাকার করে আবার সেই আগুনেরই প্রচণ্ড গম্ভীর তেজ দেখিয়া বিস্ময়ে মানুষ অবাক হইয়া থাকে। এমডেন (Emden) নামে জার্মানদের একটা যুদ্ধ জাহাজ কয়েকদিন বঙ্গোপসাগরে ভারি উৎপাত করিয়াছিল। সেই জাহাজের একটা গোলা মান্দ্রাজের একটা প্রকাণ্ড কেরোসিনের চৌবাচ্চায় পড়িয়া সমুদ্রের ধারে যে অগ্নিকাণ্ড লাগাইয়াছিল 'তামাশা' হিসাবে সে দৃশ্য নাকি অতি চমৎকার হইয়াছিল! আর কেরোসিনের জন্ম যেখানে যেখানে ব্যবসার জন্য খনি খুঁড়িয়া, কুয়া বসাইয়া, কেরোসিনের হ্রদ বিল ও কেরোসিনের ফোয়ারার সৃষ্টি করা হয় সেখানে যখন আগুন ধরিয়া যায়, আর লক্ষ লক্ষ মণ কেরোসিন ধূ ধূ করিয়া জ্বলিতে থাকে তখন ব্যাপারটি যে কেমন হয়, তাহার আর বর্ণনা হয় না। পেটুক আগুন তখন মনের মতো খোরাক পাইয়া উল্লাসে লক্ষ লক্ষ জিভ মেলিয়া ধোয়ার হুংকার ছাড়িয়া স্বর্গ মর্ত গ্রাস করিতে চায়। তাহার কাছে লঙ্কাকাণ্ডই-বা কি আর খাণ্ডবদাহনই-বা লাগে কোথায়।

সন্দেশ—অগ্রহায়ণ, ১৩২৫


লাইব্রেরি

 লাইব্রেরি মানে পুস্তকাগার বা কেতাবখানা-অর্থাৎ যেখানে বই রাখা হয়। আজকাল আমাদের দেশে শহরে গ্রামে নানা জায়গায় ছোটো-বড়ো নানারকম লাইব্রেরি দেখা দিয়েছে, সুতরাং লাইব্রেরি জিনিসটা যে কিরকম সেটা আর কাউকে বুঝিয়ে দেবার দরকার নাই।

 পৃথিবীর বড়ো-বড়ো লাইব্রেরির নাম করতে গেলে লণ্ডনের রৃটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরির নামটা নিশ্চয় করা উচিত। এই লাইবেরিতে সকল দেশের সকল সময়ের এবং সকলরকমের বই সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। আসিরিয়া বা অসুর দেশের রাজা অসুর-বানিপালের আড়াইহাজার বছরের পুরানো লাইব্রেরি খুঁড়ে সেখান থেকে প্রায় বিশহাজার ইটের পুঁথি এখানে এনে রাখা হয়েছে। তাতে তীরের ফলকের মতো খোচা-খোঁচা সব অক্ষর; সেই অক্ষর বুঝবার জন্য কত বড়ো-বড়ো পণ্ডিতকে কত বছরের পর বছর ভাবতে হয়েছে। তাতে আসিরিয়া দেশের জ্যোতিষ পুরাণ ইতিহাস আইন আর ধর্মকর্মের কথা আছে, গল্পের বই কবিতার বই আছে, এমন-কি, লাইব্রেরির ক্যাটালগ বা বইয়ের ফর্দ পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। তার চাইতেও অনেক পুরাতন পুঁথি কিছু কিছু আছে, সেগুলি বেবিলনিয়ার ভাষায় লেখা। তার মধ্যে একখানা পুঁথি প্রায় হাজার বছর আগেকার। পেপিরস গাছের নরম হালের উপর ছবির অক্ষরে লেখা ইজিপ্টের পুঁখিও সেখানে অনেক আছে।

নানা নিবন্ধ
২৩৩