পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নির্ভুল। অঙ্কটা যদি ঠিকমতো দেওয়া হয়, কলের জবাবও ঠিক হবেই। কারণ কল কখনো অন্যমনস্ক হয় না—তার হুশিয়ারির কোনো ত্রুটি হয় না। বড়ো-বড়ো ব্যাঙ্কের হিসাব রেখে রেখে যারা পাকা হয়ে গেছে, এই কলের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে তারা পর্যন্ত হার মেনে যায়। তাদের কাজ অর্ধেকটুকু বা সিকিটুকু হতে না হতেই কলের কাজ শেষ হয়ে যায়, আর সেটা ঠিক হল কিনা তাও দুবার করে মিলিয়ে দেখবারও দরকার হয় না।

সন্দেশ-জ্যেষ্ঠ, ১৩২৬


সমুদ্রবন্ধন

 মানুষ টেলিগ্রাফের কৌশল যখন আবিষ্কার করল, সে প্রায় একশো বছরের কথা। সেই সময় থেকে এই পৃথিবীটার আষ্টেপৃষ্টে খুঁটি মেরে তার বসিয়ে মানুষ দেশ-বিদেশে খবর চালাচালি করবার ব্যবস্থা করে আসছে। তারের পথ দিয়ে বিদ্যুতের খবর চলে; সেই তার মানুষ যেখান দিয়েই নিতে পেরেছে—সেখান দিয়েই খবর চলবার পথ খুলে গিয়েছে। কেবল ডাঙায় নয়, গভীর সমুদ্রের ভিতর দিয়েও হাজার হাজার মাইল তার পৃথিবীর এপার-ওপার জুড়ে ফেলেছে। সমুদ্রের মধ্যে খোঁটা বসাবার জো নাই, এমন কিছু নাই যার সঙ্গে তার বেঁধে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায়-কাজেই সেখানে টেলিগ্রাফের তার বসাবার একমাত্র উপায় হচ্ছে তারের দুই মাথা ডাঙায় রেখে বাকি সমস্ত তারটিকে জলের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া।

 সত্তর বৎসর আগে যখন এইরকমভাবে ইংল্যাণ্ডের সঙ্গে ফ্রান্সের তারের যোগ করবার প্রস্তাব হয়েছিল তখন লোকে সেটাকে পাগলের প্রস্তাব বলে ঠাট্টা করেছিল। অথচ এখন তার চাইতে বড়ো-বড়ো, একটি নয়, দুটি নয়, অন্তত দুহাজার টেলিগ্রাফের লাইন সমদ্রের নীচে বসানো হয়েছে। মানুষের যত বড়ো-বড়ো র্কীতি আছে তার মধ্যে এই সমুদ্রবন্ধনের কীর্তিটা বোধ হয় কারও চাইতে কম আশ্চর্য নয়। এর জন্য মানুষকে যে কতরকম বাধাবিপদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তা আর বলে শেষ করা যায় না। ইংল্যাণ্ড আর ফ্রান্সের মধ্যে পঁচিশ-ত্রিশ মাইল সমুদ্রের ফারাক। সে সমুদ্রও খুব গভীর নয়। ১৮৫০ খৃষ্টাব্দে অনেক হাজার টাকা খরচ করে এইটুকু সমুদ্রের মধ্যে তার ফেলা হল আর সেই তার দিয়ে এপার-ওপার খবর চলাচল হল-তখন টেলিগ্রাফ কোম্পানির মনে খুবই উৎসাহ হয়েছিল। কিন্তু সে উৎসাহ চব্বিশ ঘটার বেশি থাকে নি। কারণ, একটা দিন যেতে না যেতেই জেলে জাহাজের জালের টানেই তীরের লাইন ছিঁড়ে গিয়ে খবর আসা বন্ধ হয়ে গেল। পরের বছর আবার দুইলক্ষ টাকা খরচ করে অনেক কষ্টে আরো মোটা আর মজবত তার বানিয়ে নতুন লাইন বসানো হল। সেই তারে, অনেকদিন বেশ কাজ চলবার পর লোকের মনে বিশ্বাস হল যে-হ্যাঁ, ছোটোখাটো সমুদ্রের মধ্যে তার বসানো চলতে পারে।

 পরের বৎসর ইংল্যাণ্ড ও স্কটল্যাণ্ড থেকে আয়ার্ল্যাণ্ড পর্যন্ত টেলিগ্রাফের লাইন বসাবার জন্য তিনবার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনবারই সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। দুবার জোয়ার-

২৪২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২