পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিমাণ খাঁটি ফস্‌ফরাস্ বার করা যায় তা খাওয়ালে অন্তত পাঁচশো মানুষ মারা পড়বে। দেশলাই বানালে তাতে প্রায় আটলক্ষ দেশলাইয়ের মসলা হবে।

সন্দেশ—অগ্রহায়ণ-পৌষ, ১৩২৬


অতিকায় জাহাজ

 শৌখিন ধনীদের জন্য আর বড়ো-বড়ো ব্যবসায়ীদের জন্য যে-সমস্ত জাহাজ অতলান্তিক মহাসাগরের খেয়া পারাপার করে, তেমন বড়ো জাহাজ পৃথিবীর আর কোথাও নাই। কি করে খুব তাড়াতাড়ি সাগর পার করা যায় আর আরামে পার করা যায়, আর একসঙ্গে অনেক লোককে বিনা কষ্টে পার করা যায়, তার জন্য বড়ো-বড়ো জাহাজকোম্পানিদের মধ্যে রেষারেষি চলে। এক-একটা জাহাজ নয়, যেন এক-একটা শহর, রাজারাজড়ার থাকবার মতো শহর। তারই খুব বড়ো দু-একটির নমুনা দেওয়া হয়েছে।

 জাহাজের সাঁতার-ঘরটি দেখা যাক। মধ্যেকার চৌবাচ্চাটি হচ্ছে বাইশ গজ লম্বা তার আঠারো গজ চওড়া। এ ছাড়া নানারকম স্নানের ঘর, তুর্কী হামাম, ফোয়ারা স্নান প্রভৃতির আলাদা বন্দোবস্ত আছে। বারো তলা জাহাজ, তার মাঝিমাল্লা যাত্রী সব নিয়ে লোকসংখ্যা পাঁচহাজার হবে। পাঁচটি জাহাজ লম্বালম্বি সার বেঁধে দাঁড়ালে, এক মাইল পথ জুড়ে বসবে।

 একটি জাহাজের এক সপ্তাহের খোরাক হল বাইশটা ট্রেন বোঝাই কয়লা—এক-একটা ট্রেনে সাড়ে অটিহাজার মণ। জাহাজের মানুষগুলোর খোরাকের হিসাবও বড়ো কম নয়। এক-এক যাত্রায় পশুমাংস ষাটহাজার মণ, পাখির মাংস দেড়শো মণ, মাছ একশো পঁচিশ মণ, ডিম আটচল্লিশ হাজার, আলু ষোলোশো মণ, তরিতরকারি চারশত মণ, টিনের সবজি ছয়হাজার টিন আর কফি ও চা নব্বই মণ লাগে। তা ছাড়া ফল দুধ কোকো চকোলেট ইত্যাদিও সেইরকম পরিমাণে।

 জাহাজের মধ্যে বড়ো-বড়ো খানাঘর চা-ঘর ইত্যাদি তো আছেই, তা ছাড়া নানারকম হোটেল সরাই-এর অভাব নেই। ধোপা, নাপিত, ফুলের দোকান, ছবির দোকান, মিঠাই-এর দোকান, প্রকাণ্ড থিয়েটার ও নাচঘর এ-সবও জাহাজের মধ্যেই পাবে। উঠবার জন্য লিফট, বা চলতিঘর। ইচ্ছা করলে আর টাকা থাকলে, সেখানে আলগা বাড়ি ভাড়ার মতো করে থাকা যায়-একবারের (অর্থাৎ পাঁচদিনের) বাড়িভাড়া ধর পনরোহাজার টাকা। একএকটি জাহাজ করতে খরচ হয় প্রায় দু-তিনকোটি টাকা।

সন্দেশ-মাঘ-ফাগুন, ১৩২৬


আকাশের বিপদ

 ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ'। মানুষের যখন পালাবার পথ থাকে না তখন লোকে এইরকম বলে। কিন্তু আজকালকার লোকে আকাশ দিয়েও পালাতে জানে। তা বলে

২৫৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২