পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাঁদমারি

 সৈন্যেরা যেখানে বন্দুক ছুঁড়তে শেখে, সেখানে একটা তক্তার উপরে মন্ত চাঁদের মতো একটা গোল চক্র আঁকা থাকে, তার উপর নিশান করে সৈন্যের গুলি চালায়। লোকেরা তাকে ‘চাঁদমারি’ বলে। কেন বলে তা ঠিক জানি না, বোধ হয় ওখানে ‘চাঁদ'কে মারে বলে তার নাম চাঁদমারি।

 আমেরিকার এক মাতাল গোলন্দাজের গল্প শুনেছিলাম, সে বনের মধ্যে গাছের আড়ালে আলো জ্বলতে দেখে সেই অলোর উপর তাক করে কামানের গোলা চালাচ্ছিল। এমন সময় তার কাপ্তান এসে বললেন “ব্যাপার কি? কামান দাগছ কিসের জন্য?” গোলন্দাজ বললে, “ঐ যে সামনে বনের মধ্যে কারা আলো জ্বালিয়েছে, ওদের আলো ফুটো করে দিচ্ছি।” কাপ্তান বললেন, “ওরে হতভাগা! ওটা যে চাঁদ উঠছে, দেখতে পাস নে?” তখন গোলন্দাজের হুঁস হল, সে তাকিয়ে দেখল যে এতক্ষণ সে চাঁদকে ফুটো করবার আশায় গুলি চালাচ্ছিল!

 পৃথিবীর বাইরে আকাশের গায়ে যে-সমস্ত আলো আমরা দেখতে পাই, যাদের চন্দ্রসুর্য গ্রহনক্ষত্র বলি তাদের মধ্যে চাঁদটাই আমাদের সবচেয়ে কাছে। কিন্তু হিসাব করলে দেখি, সেও বড়ো কম নয়-প্রায় আড়াই লক্ষ মাইল। মানুষের সবচাইতে ভয়ানক যে কামান, তার গোলা গিয়ে পড়ে ষাট মাইল দূরে। বড়ো-বড় কামানের মুখ থেকে অসম্ভব বেগে গোলা ছুটে বেড়ায়, কিন্তু তবুও সে পৃথিবীর টান ছাড়িয়ে যেতে পারে না। প্রথমে তার যতই তেজ থাকুক, শেষটায় ক্রমে নিস্তেজ হয়ে সেই পথিবীতেই ফিরে আসে। কিন্তু পণ্ডিতেরা বলেন, একটা সাধারণ বড়ো কামানের গোলাকে যদি আর পাচ-দশ গুণ বেগে খাড়া আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া যায়, তা হলে সে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না—একেবারে পুথিবীর এলাকার বাইরে শূন্যের মধ্যে ছুটে বেরিয়ে যাবে। গোলাটাকে যদি হিসাবমতো চাঁদের দিকে তাক করে ছেড়ে দেওয়া যায়, তা হলে সে একেবারে চাঁদের গায়ে গিয়ে ঢুঁ মেরে পড়বে। কতখানি জোরে, কিরকমভাবে গোলা ছুঁড়লে সে ঠিক চাদে গিয়ে পড়বে, তাও হিসাব করে বলে দেওয়া যায়।

 এক ফরাসী লেখক চাঁদে যাওয়ার সম্বন্ধে একটা চমৎকার গল্প লিখেছিলেন। তাতে কয়েকজন লোককে একটা প্রকাণ্ড গোলার মধ্যে পুরে চাঁদের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। একটা পাহাড়ের মধ্যে প্রকাণ্ড কামান গেঁথে গোলা ছুড়বার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গল্পের আর সব মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু গোলা যখন ছুটে বেরোল তখনো যে ভিতরের মানুষগুলো বেঁচে রইল, এটা কিছুতেই সম্ভব হয় না।

 আজকাল শুনতে পাচ্ছি, কামানের গোলার চাইতে চাঁদে হাউই ছুড়ে মারা নাকি অনেক বেশি সহজ। আমেরিকার একজন বৈজ্ঞানিক পণ্ডিত অধ্যাপক গডার্ড সাহেব একরকম আশ্চর্য নুতন ধরনের হাউই বানিয়েছেন! তার ভিতরে এমন অদ্ভুত নূতন কৌশলে বারুদমসলা পোরা থাকে যে, সে বারুদ একবারে সমস্তটা ফাটে না—থেকে থেকে এক-একবার

নানা নিবন্ধ
২৬৩