পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বারুদ ফুটে ওঠে আর তার ধাক্কায় হাউই ক্রমাগত এগিয়ে চলে। প্রথম ধাক্কাতেই হাউই অনেক দূর পর্যন্ত যায়, তার পর যেই তেজ থেমে আসতে থাকে, অমনি আবার দ্বিতীয় ধাক্কা এসে লাগে। সেটার বেগ কমতে না কমতেই আবার তৃতীয় ধাক্কা। এমনি করে নিজের ভিতরকার বারুদের কাছে বার বার ধাক্কা খেয়ে খেয়ে সে হাউই অসম্ভব উঁচুতে উঠে যায়।

 গডার্ড সাহেবের তৈরি চার সের ওজনের একটা হাউই অনায়াসে দুশো মাইল উঁচুতে উঠতে পারে। আর বারুদসুদ্ধ ষোলো মণ ওজনের ঐরকম একটা হাউই বানিয়ে যদি আকাশের দিকে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাহলে সে হাউই আর ফিরে আসবে না। বারুদ ফুরাবার আগেই সে এতদূর গিয়ে পড়বে যে পৃথিবী তাকে আর কিছুতেই ফিরিয়ে আনতে পারবে না। তখন তার বেগ আর কমবে না; সে নিজের বেগে সোজা নিজের পথে যুগের পর যুগ ছুটে চলতে থাকবে-যদি পথের মধ্যে চাঁদ কিম্বা অন্য কোনো গ্রহ কিম্বা আর কিছুতে তাকে টেনে না নেয়। গডার্ড সাহেব বলেন, এইরকমের একটা হাউইকে চাঁদের দিকে ছেড়ে দিলে সে নিশ্চয়ই চাঁদে গিয়ে পৌঁছাবে। হাজার পাঁচেক টাকা হলেই নাকি এইরকম একটা হাউই বানানো যেতে পারে। চাঁদের অন্ধকার দিকটায় যদি হিসেব করে হাউই ফেলা যায়, আর হাউয়ের মধ্যে যদি এমন মসলা দেওয়া থাকে যে চাঁদের গায়ে ঠেকবামাত্র তাতে বিদ্যুতের আলোর মতো চোখ-ঝলসান আগুন জ্বলে ওঠে, তা হলে পৃথিবীতে বসে দুরবীন দিয়ে সেই আলোর ঝিলিক দেখে পণ্ডিতেরা বলতে পারবেন-‘ঐ হাউই গিয়ে চাঁদের গায়ে পড়ল।'

 আরো অনেকখানি বড়ো করে যদি চাঁদমারি হাউই বানানো যায়, আর তার মধ্যে দু-চারজন মানুষ থাকবার মতো ঘরের ব্যবস্থা করা যায় আর বড়ো-বড়ো চোঙায় ভরা বাতাস আর কিছু দিনের মতো খাবার খোরাক যদি সঙ্গে দেওয়া যায়, তা হলে মানুষও চাঁদে বেড়াতে যেতে পারবে না কেন? চাঁদে লেগে হাউই যাতে চুরমার হয়ে না যায়, তার জন্য নানারকম বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। ফিরে আসবার সময় পৃথিবীমুখো করে হাউই ছাড়বার মতন ব্যবস্থাও সহজেই করা যায়। এর মধ্যেই নাকি কোনো কোনো উৎসাহী লোকে খুব সাহস করে গডার্ড সাহেবকে লিখেছেন যে, চাঁদে যাওয়ার জন্য যদি লোকের দরকার হয়, তা হলে তাঁরা যেতে রাজি আছেন। কেউ কেউ নাকি তার জন্য টাকাও দিতে চেয়েছেন। কিন্তু গডার্ড সাহেবের সেরকম কোনো মতলবই নেই।

 যাহোক মানুষের খেয়াল চাপলে মানুষ সবই করতে পারে। হয়তো তোমরা সব বুড়ো হবার আগেই শুনতে পাবে যে চাঁদের দেশের প্রথম যাত্রীরা চাঁদে যাবার জন্য রওনা হয়েছে। তারা যদি গিয়ে ফিরে আসতে পারে, তা হলে কত যে আশ্চর্য অদ্ভুত কাহিনী তাদের কাছে শুনতে পাবে, তা এখন কল্পনা করাও কঠিন।

সন্দেশ-আষাঢ়, ১৩২৭
২৬৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২