এরোপ্লেন অনায়াসেই ঘণ্টায় একশো মাইলের বেশি হয়। তা ছাড়া, এরোপ্লেন একেবারে সোজা রাস্তা ধরে চলে-তার জন্য আর রাস্তা তৈরি করতে হয় না-কোনো বাধাই নাই তার। আমেরিকাতে অজিকাল নিয়মমতো এরোপ্লেনে ডাক যা। ভারতবর্ষের এক কোনা থেকে আরেক কোনায় ডাক যেতে যত সময় লাগে কয়েক বৎসর পর হয়তো সেই সময়ের মধ্যেই বিলাতের ডাক এদেশে এরোপ্লেনে পৌছে যাবে।
কেউ কেউ হয়তো বলবে, “দূর ছাই। কাঠের কথা আবার শুনব কি? ভারি তো জিনিস তাই নিয়ে আবার কথা!” তা বলতে পার কিন্তু কাঠ যে মানুষের কাজের পক্ষে কত বড়ো দরকারি জিনিস, তা একবার ভেবে দেখেছ কি? এখন নাহয় সভ্য মানুষে কয়লা, কেরোসিন, গ্যাস বা ইলেকট্রিক চুল্লির ব্যবহার শিখেছে। কিন্তু তার আগে তো জ্বালানি কাঠ না হলে মানুষের রান্নাবান্না কলকারখানা কিছুই চলত না, শীতের দেশে মানুষের বেঁচে থাকাই দায় হত। এই তো কিছুকাল আগেও কাঠের জাহাজ না হলে মানুষে সমুদ্রে যেতে পারত না, কাঠের কড়ি বরগা থাম না হলে তার ঘর বাড়ি তৈরি হত না।
বলতে পার, এখন তো এ-সবের জন্য কাঠের ব্যবহার কমে আসছে। তা সত্যি। এমনকি, ঘরের দরজা জানালা আসবাবপত্র পর্যন্ত ক্রমে কাঠের বদলে অন্য জিনিস দিয়ে তৈরি হতে থাকবে তাতেও কোনো সন্দেহ নাই! আর পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই হয়তো দেখবে, ঘরে ঘরে নানারকম ঢালাই-করা মেটে পাথরের আসবাবপত্র। কিন্তু তবুও দেখা যায় যে খব ‘সভ্য' জাতিদের মধ্যেও কাঠের ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলছে, কমবার লক্ষণ একটুও দেখা যায় না। প্রতি বৎসরে এত কোটি মণ কাঠ মানুষে খরচ করে এবং তার জন্য এত অসংখ্য গাছ কাটতে হয় যে অনেকে আশঙ্কা করেন, হয়তো বেহিসাবী যথেচ্ছ গাছ কাটতে কাটতে কোনো দিন পৃথিবীতে কাঠের দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হবে। এরকম যে সত্যি সত্যিই হতে পারে, তার প্রমাণ নানা দেশে পাওয়া গিয়েছে। আমেরিকার যুক্তরাজ্যে এক সময় এমন প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বন ছিল আর তাতে এত অসংখ্য গাছ ছিল যে লোকে বলত এ দেশের কাঠ অফুরন্ত-এর সমস্ত পৃথিবীময় কাঠ চালান দিয়েও কোনোদিন এত গাছ কেটে শেষ করতে পারবে না। কিন্তু সে দেশের লোকে এমন বে-আন্দাজ ভাবে এর মধ্যে বন জঙ্গল সব কেটে প্রায় উজাড় করে ফেলেছে যে এখন তারা নিজেরাই অন্য দেশ থেকে কাঠ আমদানী করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রতিদিন জাহাজ বোঝাই করা লক্ষ লক্ষ মণ কাঠ সাগর পার হয়ে নানা দেশ হতে, নানা দেশে চলেছে। এত কাঠ লাগেই-বা কিসে, আর আসেই-বা কোথা থেকে? কানাডা রুশিয়া নরওয়ে ভারতবর্ষ অস্ট্রেলিয়া-কত জায়গা থেকে কাঠ চলেছে ইউরোপ আমেরিকার বড়ো-বড়ো বন্দরের দিকে। যেখানেই নতুন রেলের লাইন হচ্ছে সেখানেই লাইনের নীচে