পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যখন বরফ পড়ে পথঘাট সব পিছল হয় তখন সেই পিছল পথের উপর দিয়ে গাছের গুড়িগুলোকে টেনে নিয়ে নদীর ধারে কিম্বা রেলের লাইনে নিয়ে হাজির করে। যে বৎসর খুব তাড়াতাড়ি শীত পড়ে যায় কিম্বা খুব অতিরিক্ত বরফ পড়ে সে বৎসর তাদের ভারি কষ্ট। একে শীতের কষ্ট, তার উপর আবার নরম বরফের মধ্যে দিয়ে কাঠ টানবার কষ্ট। কাঠ নেবার বন্দোবস্ত এক-এক জায়গায় এক-একরকম, পথ ঘাটের অবস্থা বুঝে কোথাও ঘোড়ায়-টানা বা গোরুতে-টানা গাড়িতে করে কাঠ নেয়; কোথাও গাছের গুঁড়িগুলো ভারি ভারি মজবুত তক্তার উপর চাপিয়ে সেই তক্তা হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যায়। কোথাও গুড়িগুলোকে একটার পর একটা মালার মতো সাজিয়ে বেঁধে, সেই কাঠের মালা টেনে নেওয়া হয়। সঙ্গে লোক থাকে, তারা কেবল দেখে, যেন কোনোটা কিছুতে আটকিয়ে না যায়। অনেক জায়গায় কাঠ নেবার জন্য রীতিমতো রেলের লাইন পাতা হয়। আবার কোনো কোনো জায়গায় পিছল বরফের উপর বিনা লাইনেই এঞ্জিন চলে। সে এঞ্জিনের সামনে চাকা নাই, ‘প্লে’ গাড়ির মতো দুদিকে দুটো বাঁকানো লোহার ধনুক-দণ্ড।

 এমনি করে তারা জঙ্গলের গাছ কেটে এনে রেলের লাইন বা নদীর ধারে এসে হাজির হয়। তার পর গাছের গুঁড়িগুলোকে কারখানায় নিয়ে কেটে চিরে তক্তা বানিয়ে চালান দিতে হবে। নদীতে যদি বেশ স্রোত থাকে তা হলে এমন জায়গায় কারখানা বসানো হয় যে, কাঠগুলোকে ভাসিয়ে দিলে তারা আপনা-আপনি গিয়ে কারখানায় হাজির হবে। সেখানে কারখানার লোকেরা তাদের ঠেকিয়ে বড়ো-বড়ো লগি দিয়ে কারখানার ভিতরে নিয়ে পুরবে। কিন্তু সব জায়গায় সেরকম সবিধামতো নদী পাওয়া যায় না। হয়তো কোনো নদীতে তেমন স্রোত নেই, কিম্বা তাতে ওরকম কাঠ ছেড়ে দেবার হুকুম নেই। সেখানে মস্ত মস্ত কাঠের ভেলা বানিয়ে সেই ভেলাগুলোকে জাহাজে টেনে কারখানায় নিতে হয়।

 স্রোতে কাঠ ভাসিয়ে দেওয়া যে-সব সময়ে বড়ো সহজ কাজ, তা মনে কর না। অনেক সময়ে মাঝ পথে নদীর বাঁকে কাঠে কাঠে লেগে এমন জমাট বেঁধে যায় যে আবার রীতিমতো হাঙ্গামা করে তাদের জট ছাড়িয়ে না দিলে কাঠ আর চলতে পারে না। এ কাজে বিপদ খুবই; অনেক সময়ে হঠাৎ কাঠের জমাট খুলে গিয়ে কাঠগুলো এমন হুড়হুড় করে ভেসে আসে যে তার সামনে পড়ে অনেক মানুষের প্রাণ যায়। কারখানায় এলে পর সেখানকার লোকেরা কাঠগুলোকে এক-এক করে কারখানার মুখের মধ্যে পুরে দেয়, আর সেখানে করাতকলে কাঠগুলো আপনা-আপনি কেটে চিরে তক্তা হয়ে বেরিয়ে আসে। একদিকে ক্রমাগত গাছের গুঁড়ি ঢুকছে, আর-একদিকে ক্রমাগত কাটা তক্তা বেরিয়ে আসছে।

সন্দেশ-ফাগুন-চৈত্র, ১৩২৭


হাওয়ার ডাক

 একটা সরু চোঙার মধ্যে ঢিলাভাবে একটা ছিপি বসাইয়া চোঙার মধ্যে ফুঁ দিলে ছিপিঠা হাওয়ার ঠেলায় ছুটিয়া বাহির হয়। যদি মুখে ফুঁ না দিয়া পাম্প-কলের দম্কা হাওয়া

২৭৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২