যায়, 'আরো প্রহরী পাঠাও, আরো প্রহরী পাঠাও।' শরীরের কারখানায় তখন লাখে লাখে শ্বেত-কণিকা তৈরি হতে থাকে। শরীরের মরণ-বাঁচন অনেকটা তাদেরই হাতে।
মনে কর তোমার হাতে এক জায়গায় একটুখানি কেটে গেছে; যেখানে কাটে সেখান দিয়ে তো রক্ত বেরোবেই কিন্তু ক্রমাগতই যদি রক্ত বের হতে থাকে, তা হলে সে তো বড়ো মারাত্মক কথা—তাই শরীর প্রথমেই চেষ্টা করে রক্ত থামাতে। রক্ত থামাবার উপায়টিও বড়ো চমৎকার; রক্তটা বাইরে এসে আপনা থেকেই কাটা ঘায়ের মুখে ছিপির মতো জমাট বেঁধে যায়। তখন সেই জায়গাটা যদি অণুবীক্ষণ দিয়ে দেখ তা হলে দেখবে হাজার হাজার লাল কণিকা তার মধ্যে তাল পাকিয়ে মরে আছে। সাদা প্রহরীরাও ততক্ষণ নিশ্চিন্ত হয়ে থাকে না; তারা সব ছুটে এসে মরা লাল কণিকাগুলিকে খেয়ে খেয়ে সাফ করতে থাকে, আর কাটা চামড়ার জায়গায় নূতন চামড়া গজাবার ব্যবস্থা করতে থাকে। কাটা ঘায়ের মুখটি হচ্ছে রোগের বীজ ঢুকবার খোলাপথ; যদি তেমন তেমন বীজ সেখান দিয়ে ঢুকতে পারে, তা হলেই শীঘ্র শীঘ্র ঘা শুকাবার পক্ষে মুস্কিল হয়, সামান্য একটা ঘা পেকে বা পচে উঠে বিষম কাণ্ড বাধিয়ে তোলে। তখন প্রহরীদের খাটুনিও খুব বেড়ে যায়। ঘা পাকলে তা থেকে যে পুঁজ বেরোয় তার মধ্যে দেখা যায় অসংখ্য শ্বেতকণিকা মরে আছে, আর তার মধ্যে রোগের বীজাণু কিল্বিল্ করছে।
একজন বক্তা, তার তিনলক্ষ শ্রোতা। একজন কথা বলছে, বক্তৃতা করছে, গান গাইছে, বাজনা বাজাচ্ছে আর তিনলক্ষ লোক তার প্রত্যেকটি সুর পরিষ্কার করে শুনতে পাচ্ছে। কথাটা শুনতে কেমন অসম্ভব শোনায় না? কিন্তু আমেরিকার বড়ো-বড়ো শহরে এরকম আজকাল প্রতিদিনই ঘটছে। আরো আশ্চর্য এই যে, এই তিনলক্ষ লোক, যারা সকলে মিলে বক্তৃতা শুনছে তারা সব এক জায়গায় বসে থাকে না। কেউ দুই মাইল চার মাইল, কেউ বিশ মাইল পঁচিশ মাইল দুরে, যে যার ঘরে আরাম করে বসে বসে বক্তৃতা শোনে। এমন-কি, দেড়শো-দুশো মাইল দূর থেকেও লোকের বক্তৃতা শুনবার কোনো বাধা হয় না। দুবছর আগেও এরকম হওয়া সম্ভব বলে লোকে মনে করতে পারত না। কিন্তু আজকাল বিনা তারের টেলিফোন হওয়াতে এ-সব সম্ভব এবং সহজ হয়েছে।
তুমি যখন কথা বল তখন তোমার গলার আওয়াজ চারিদিকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। যতদূর পর্যন্ত সে আওয়াজ যায় ততদূর পর্যন্ত বাতাসে নানারকম ঢেউ খেতিয়ে যায়। মোটা গলার বড়ো-বড়ো ঢেউ সরু গলার ছোটো-ছোটো ঢেউ। চেঁচিয়ে বললে বাতাসে জোরে জোরে ঢেউয়ের ধাক্কা লাগে, আস্তে বললে সে ঢেউ বাতাস ঠেলে বেশি দূর এগোতেই পারে না। কিন্তু যেমন করেই কথা বল আর যত জোরেই বল, খানিক দূর পর্যন্ত গিয়ে সে ঢেউ আপনি মিলিয়ে যাবে। তার পরে আর তোমার আওয়াজ পৌঁছবে না।